রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে সে আগুন না নিভিয়ে ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিল উৎসুক জনতা। আর এই খামখেয়ালিতে মাত্র ১০ মিনিট স্থায়িত্বের আগুনে ঝরে গেছে পাঁচটি প্রাণ। এমন ‘ভিডিওবাজ’ জনতার কাণ্ডজ্ঞান ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুধবার (২৭ মে) রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আগুন লাগলে খবর পেয়ে তাদের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন মাত্র ১০ মিনিট স্থায়ী হলেও এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন পাঁচজন।
ফায়ার সার্ভিসের হাতে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, তাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে থেকেই সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় লেগেছিল। তবে সেই জনতা আগুন নেভাতে এগিয়ে না এসে বরং ভিডিও ধারণ করাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাই হতবাক হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলেন, এসব মানুষের কাণ্ডজ্ঞান দেখে অনেকটাই অবাক হতে হয়। চোখের সামনে আগুন জ্বলছে, সেটা নেভাতে এগিয়ে না গিয়ে ভিডিও ধারণ করতেই ব্যস্ত সবাই। এমনকি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও কেউ তাদের সাহায্য করতে যায়নি। বরং ফায়ার কর্মীদের অগ্নিনির্বাপণ কাজে বিঘ্ন ঘটে এসব ‘ভিডিওবাজ’ জনতার কারণে।
এর আগেও ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনায় উৎসুক জনতার এমন কাণ্ড দেখা যায়। আগুন নেভাতে এগিয়ে না এসে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। অথচ বিপদে এগিয়ে আসাই মানুষের ধর্ম, এবং সে রেওয়াজই মেনে আসছিলেন এ দেশের মানুষ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বলেন, আমরা বুঝতে পারি না, যেখানে এভাবে আগুন জ্বলছে, সেখানে সাধারণ উৎসুক জনতা সাহায্যে এগিয়ে আসা বাদ দিয়ে ভিডিও ধারণেই ব্যস্ত হয়ে যায়। এসব ভিডিও দিয়ে তারা কী করবে, এমনই প্রশ্ন জাগে মনে। অনেকে তো এমন অতি উৎসাহী যে ভিডিও ধারণ করার জন্য একেবারে আগুনের কাছাকাছি চলে আসে, এতে করে আমাদের কাজেও বাধা সৃষ্টি হয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার কামরুল আহসান জাগোনিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে আমাদের জানানো হয়েছে এসির বিস্ফোরণের কারণেই আগুন লেগেছে। আগুনে পাঁচজন মারা গেছেন। আগুন হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে তাঁবু গেড়ে স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে লেগেছিল।
অবশ্য হাসপাতালের কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ডা. সাগুফা আনোয়ার দাবি করেন, বৈদ্যুতিক শট-সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, আগুন লেগেছে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে। করোনা রোগীদের জন্য পাঁচ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে মূল ভবনের বাইরে একটি একতলা ভবনে। সেখানে চারজন রোগী ভর্তি ছিলেন। রাতে হঠাৎ সেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে।