স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম :: চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় আসা-যাওয়া করতে আকাশপথে বিমানভাড়া ৫৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। কোরবানির ঈদ ঘিরে মাত্র ৫০ মিনিটের এই যাত্রায় আকাশছোঁয়া এই ভাড়া হাঁকাচ্ছে দেশীয় বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস। এই ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ ঘণ্টার যাত্রায় দুবাই ভ্রমণ সম্ভব।
চট্টগ্রাম থেকে ভারতভিত্তিক বিমান সংস্থা ‘স্পাইসজেট’ তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে প্রায় সাত মাস। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা ‘বাংলাদেশ বিমান’ চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বন্ধ রেখেছে ফ্লাইট। আগে থেকেই এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করেছে আরেক দেশীয় বিমান সংস্থা ‘নভোএয়ার’। দেশীয় আরেক সংস্থা ‘এয়ার অ্যাস্ট্রা’র তো বিদেশ যাত্রার অনুমতিই মেলেনি এখনও।
ফলে আকাশপথে কলকাতায় যেতে চট্টগ্রামের যাত্রীদের কাছে ‘ইউএস বাংলা’র বিকল্প নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিযোগী না থাকায় দেশীয় বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এই রুটে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। এতে যাত্রীদের তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি শেয়ার ট্রিপের ১৪ জুন থেকে ২০ জুন চট্টগ্রাম-কলকাতা আসা-যাওয়ার ইউএস বাংলার সরাসরি ফ্লাইটে বিমান খরচ দেখাচ্ছে, ৫৩ হাজার ৩২৪ টাকা। এত টাকা ভাড়া দিয়েও লাগেজ নেওয়া যাবে মাত্র ২০ কেজি। আর ফ্লাইট হচ্ছে ৭২ আসনের ছোট এটিআর উড়োজাহাজ।
একই সময়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে লাগছে ৩২ হাজার টাকা। সময় লাগছে চট্টগ্রামের চেয়ে বেশি, ৬৫ মিনিট। এছাড়া ঢাকা থেকে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর মতো বড় উড়োজাহাজের ভ্রমণের সুযোগ মিলছে। সঙ্গে থাকছে ২৫ কেজি পর্যন্ত লাগেজ নেওয়ার সুযোগ।
আর দেশীয় নভোএয়ারে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে খরচ পড়ছে ৩১ হাজার টাকা। অন্যদিকে, বিদেশি ইন্ডিগো বিমানে ঢাকা থেকে কলকাতায় যেতে লাগছে সাড়ে ২৫ হাজার টাকা।
ঢাকা থেকে কলকাতা কিংবা ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে দেশীয় তিনটি এবং আন্তর্জাতিক তিনটি বিমান সংস্থা সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিযোগিতা থাকায় ঢাকা-কলকাতা যাত্রায় খরচ অনেক কম পড়ছে।
চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা রুটে ইউএস বাংলার বিমানভাড়া বেশি হওয়ার কারণে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কলকাতার বিমান ধরছেন। অনেক যাত্রী আবার চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে আখাউড়া গিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা বিমানবন্দর থেকে কলকাতা কিংবা ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে ভোগান্তি বাড়লেও খরচ কম পড়ছে।
চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা যেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তীকে। কিন্তু বিমানভাড়া ভাড়া চমকে দিয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ থাকায় ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে ইউএস বাংলা। এত যাত্রী থাকার পরও চট্টগ্রাম থেকে ৭২ আসনের এটিআর দিয়ে কলকাতা রুট চালাচ্ছে বিমান সংস্থাটি।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, নভোএয়ার– সব সংস্থা ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালাচ্ছে কম ভাড়ায় এ তথ্য উল্লেখ করে তপন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, তাহলে চট্টগ্রামের যাত্রীরা কেন বৈষম্যে পড়বেন?
তবে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা ভাড়া নিলেও একে ‘অস্বাভাবিক’ ভাড়া বলতে নারাজ ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। তারা এটাকে বলছে ‘মূল্য সমন্বয়’।
বিমান সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, “এই ভাড়াকে আমরা অস্বাভাবিক বলছি না। অপারেশন কস্ট অনুযায়ী ৫৪ হাজার টাকা এই ভাড়া ঠিক আছে।”
এই রুটে এতদিন খরচের চেয়ে কম ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এতদিন অপারেশনের যে কস্ট ছিল, সে অনুযায়ী ভাড়া বরং কম ছিল। আমরা এতদিন খরচের তুলনায় কম ভাড়ায় ফ্লাইট চালাচ্ছিলাম। এখন ঈদ ঘিরে সেটি কভার বা সমন্বয়ের চেষ্টা হয়েছে।”
প্রতিযোগিতা থাকলে এই ভাড়া কি একই থাকত কিনা জানতে চাইলে কামরুল বলেন, “সেটি এক কথায় আসলে বলা সম্ভব নয়। আর সবসময় ভাড়া একই হবে, সেটিও বলা যায় না। ভাড়া বাড়ার জন্য এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে।”