ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আটজন নিহতের তিন শোকাহত পরিবারকে সান্তনা ও সমবেদনা জানাতে নিহতদের বাড়িতে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান।
সোমবার (২৬ জুন) সকাল ১০টায় বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর খান এবং বেলা ১২টায় গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. আজিজার শেখের বাড়িতে গিয়ে নিহত তাসলিমা বেগমের তাসলিমার বেঁচে থাকা মেয়ে ছোট মেয়ে চায়না (২৫) ও ছেলে আনিস শেখকে (১৮) শান্তনা দেন।
এ সময় আব্দুর রহমান বলেন, ‘এই শোক বর্ণনা দেওয়ার মতো নয়, এই শোক সইবার মতো না। সত্যি কথা বলতে কি, কোন মহাশত্রুকেও যেন আল্লাহ এই ধরনের পরীক্ষায় না ফেলেন। এটাই আমরা সকলে প্রার্থনা করি।’
আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কী সান্তনা দেব। একটা পরিবার থেকে তার স্ত্রী, সোনার মতো দুটো ছেলে ও একটি মেয়ে, শালিকা ও তার ছেলে, শাশুড়িসহ সাতজন স্বজন চলে গেছে। এই পাষাণে বুক বাধা ছাড়া আরতো কিছু বলার নেই। আল্লাহ পাক তার ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দিক। যারা এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের সবাইকে আল্লাহ জান্নাতবাসি করুক, আমরা এই দোয়া করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজেই এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি এই পরিবারের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ধরনের দুর্ঘটনা সত্যিই অভাবনীয়। আল্লাহ নিহত পরিবারবর্গকে ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দিক, এটাই শুধু বলবো আজকে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোয়ালমারী পৌর মেয়র সেলিম রেজা লিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি (সাবেক) আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মৃধা মিলন, সহ-প্রচার সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিদ্দিক খান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল সিকদার, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু, দাউদুজ্জামান দাউদ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর হোসেন তুশার, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মর্তুজা তমাল, সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিক, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিদুল প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে মেয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সামনে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেলান নগরের উদ্দেশ্যে তার দুই মেয়ে, চার নাতি-নাতনীসহ সাতজন গত শনিবার (২৪ জুন) সকাল ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে রওনা দেন। পথিমধ্যে বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেস ওয়ের মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের অ্যাপ্রোচ সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দাউদাউ করে গাড়িতে জ্বলা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাদের দেহ। এ দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চালকসহ আটজন দগ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহতরা হলেন- আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম, তার বড় মেয়ে শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর খানের স্ত্রী কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮), কন্যা আফসা (২), তাসলিমার মেঝ মেয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের সেনা সদস্য মাহামুদুল হাসান রনির স্ত্রী মোসা. বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদী (১০) এবং এম্বুল্যান্স চালক ফরিদপুরের বাসিন্দা মিতুল মালোকে (২৪)।
নিহতদের লাশ ফেলাননগর-রেনিনগর কবরস্থান, মাইটকুমরা পারিবারিক কবরস্থান এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলার কুচিয়াগ্রামে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসন শনিবার রাতেই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিপুল চন্দ্র দাসকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। রবিবার দুপুরে তদন্ত কমিটি আটজন নিহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনায় শিবচর হাইওয়ে থানায় প্রাথমিকভাবে একটি জিডি করেছে হাইওয়ে পুলিশ। সোমবার দুপুরে নিহত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ২০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসন।