এখন সবার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে পারে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

0
12

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্রবাহিনী দিবসে আমি এটুকুই চাই, দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনোরকম ব্যাহত না হয়। বাংলাদেশ যেন সারাবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। প্রতিটি বাঙালি পৃথিবীর যেখানেই যাক না কেন, যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমরা বিজয়ী জাতি, উন্নত জাতি। আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলেছি একটা সম্মানজনক অবস্থানে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারদের দেওয়া সংবর্ধনা এবং ২০২০-২০২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালিন পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন এবং তার সরকার সবার সহযোগিতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে আজ তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। এমনকি করোনাভাইরাস মোকাবিলাতেও বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তার প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবিসহ সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শুধু করোনাভাইরাস নয়, আমরা যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করেছি।

সরকার সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে সমান পা মিলিয়ে চলতে পারে। সে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জন ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে, এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আজকের দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। জাতির পিতা বারবার কারাবরণ করেছেন। এই দেশের মেহেনতি মানুষের জন্যই তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের স্বাধীনতা, কাজেই তা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, বাংলাদেশকে বিশ্ব মর্যাদায় আমরা আজকে নিয়ে এসেছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।

তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকেও এ সময় অভিনন্দন জানান।

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে ২০২০-২০২১ সালের শান্তিকালিন পদকে ভূষিত করা হয়।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের হাতে সম্মানির চেক এবং উপহার তুলে দেন।

দিবসটি উপলক্ষে শেখ হাসিনা বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের মাঝে উপহার প্রদান করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন।

সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নিকটাত্মীয়সহ প্রায় ৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীরা সংবর্ধনায় যোগ দেন।

আইএসপিআর জানায়, সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা, ডেপুটি স্পীকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ, বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০২১ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীগণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাদের উত্তরাধিকারীগণ, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের এই গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্র করা হয়।

তিনি বলেন, সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয় পেত, এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ নিজেদের বিজয়গাঁথার ইতিহাসকে বিকৃত করার এমন নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।

জাতির পিতার দূরদর্শিতার অনুসরণে তার সরকার দেশকে আজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত গৌরবকে হারিয়ে ফেলেছিল। আজকে আবার সেই গৌরব তারা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।