শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এবার বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন। বিচারের নামে ড. ইউনূসকে ক্রমাগত ভয়ভীতি ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সংস্থাটি। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্বসংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হয়েছে।ভলকার তুর্ক বলেন, ড. ইউনূস প্রায় এক দশক ধরে হয়রানি ও ভয়ভীতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি আলাদা বিচার চলছে, যাতে তার কারাদণ্ড হতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগে। যদিও অধ্যাপক ইউনূস আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে, প্রায়শই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাতে তার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এর আগে ২৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দেন শতাধিক নোবেল জয়ীসহ ১৬০ বিশ্বনেতা। এর একদিন আগে ইউনূসের সমর্থন জানিয়ে চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যেই ড. ইউনূসকে নিয়ে টুইট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক এবং মানবাধিকারকর্মী কেরি কেনেডি। তিনি বিশ্বখ্যাত মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট। গত ৯ মার্চ অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনীতিক, অধ্যাপক, শিল্পোদ্যোক্তাসহ বিশ্বখ্যাত ৪০ ব্যক্তিত্ব। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দেন।
এদিকে সবশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকারে’র দুই প্রতিনিধিত্বকারী আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোও আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আগামী বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। ১০ বছর আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি ‘সত্য অনুসন্ধান’ প্রতিবেদনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। তারা উভয়ই হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠান অধিকারের লাইসেন্সও নবায়ন করা হচ্ছে না।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ প্রতিস্থাপনের জন্য সংসদে পেশ করা নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনকে আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নতুন আইনে জরিমানা দিয়ে কারাদণ্ডকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধের জন্য জামিনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু আইনের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের যে উদ্বেগ রয়েছে, তা চিহ্নিত ও সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।