কক্সবাজারে পাহাড়ধসে ছয় রোহিঙ্গাসহ নিহত ৮

0
20

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, মহেশখালী ও টেকনাফে পৃথক পাহাড় ধস এবং পানিতে ভেসে গিয়ে ছয় রোহিঙ্গাসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসে নিহতদের মধ্যে এক পরিবারে দুজন ও আরেক পরিবারে তিনজন রয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ভোররাত ও সকালের দিকে পৃথক সময়ে এসব পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ।

উখিয়ার ক্যাম্প-১০ এ পাহাড় ধসের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও দুজন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বালুখালী ক্যাম্পে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে ঢলের পানিতে গোসল করতে নেমে ভেসে গিয়ে এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামশুদ্দোজা নয়ন।

নিহতরা হলেন-রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক জি/৩৮ এর শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তাদের ছেলে শফিউল আলম(৯), একই ক্যাম্পের মো. ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৫), তাদের ছেলে আব্দুর রহমান (৩) ও মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা (১)। আহতরা হলেন-শাহ আলমের মেয়ে নুর ফাতেমা (১৪) ও ছেলে জানে আলম (৮)।

বানের পানিতে ভেসে ক্যাম্প-৮ এ মৃত্যু হয়েছে বাহার নামের এক শিশুর। তার বিস্তারিত পরিচয় দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামশুদ্দোজা নয়ন জানান, সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুর থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক- জি/৩৭ এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের মা-ছেলেসহ দুই, অপর পরিবারে মা-ছেলে-মেয়েসহ তিনজন নিহত হন। প্রথম পরিবারের আরও দুইজন আহত হন।

ক্যাম্পে কর্মরত ৮ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) সিহাব কায়সার খান জানান, খবর পেয়ে ১০ নম্বর ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮ এবিপিএনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালান। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্যান্য উদ্ধারকারী দল। তাদের উদ্ধারের পরই ক্যাম্প-১০ এর সিআইসির সহযোগিতায় নিহত ও আহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ঘটবায় পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে (জিডি নং-৭৯৯/২০২১)।

এদিকে পৃথক পাহাড় ধসে মহেশখালীতে এক কিশোরী নিহত হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার ভোরের দিকে ছোট মহেশখালী উত্তর সিপাহিরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কিশোরীর নাম মোরশেদা আক্তার (১৪)। সে স্থানীয় আনছার হোসেনের মেয়ে।

ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াদ বিন আলী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টির পানিতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে পাহাড়ের মাটির আঘাতে আনছারের ঘরের দেয়াল ভেঙে ঘুমন্ত মেয়েটির ওপর পড়ে। এতে তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।

অপরদিকে, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা গ্রামে পাহাড় ধসে রকিম আলী (৪৮) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্থানীয় মনিরঘোনা গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী এতথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, রকিম আলীর বাড়ি পাহাড়ের পাদদেশে। গত দুদিনের টানা অতিবৃষ্টিত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে রকিম আলীর বাড়িতে হঠাৎ পাহাড় ধসে পড়ে। এতে বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে রকিম আলী গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে বালুখালি তুর্কি হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি আইসি এসআই মাহামুদুল হাসান মাহবুব, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাসহ প্রশাসনের অন্যান্যরা ঘটনাস্থলে যান।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী জানান, অতিবর্ষণে পাহাড় ধসে মারা যাওয়া রকিম আলীর পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ের ওপর বা পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসন কাজ করছে।