দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ২৫০ জনের প্রাণহানি হলো। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৯৬৯ জন। সব মিলিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ হাজার ৬৬০ জনে।
মঙ্গলবার (১২ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও ছয় হাজার ৮৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ছয় হাজার ৭৭৩টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৮টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৯৬৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৬৬০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫০-এ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৪৫ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন হাজার ১৪৭ জন।
নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের সাতজন পুরুষ ও চারজন নারী। তিনজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, পাঁচজন ষাটোর্ধ্ব, দুজন সত্তরোর্ধ্ব এবং একজন ৮০ থেকে ৯০ বছর বয়সী। অবশ্য মোট সংখ্যা ১১ বলা হলেও এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যানে একজন কম বলা হয় বুলেটিনে। এতে বলা হয়, মৃতদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের পাঁচজন, নারায়ণগঞ্জের একজন এবং নরসিংদীর একজন রয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের আছেন দুজন এবং সিলেট বিভাগের আছেন একজন।
গত সোমবার (১১ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত হাজার ২০৮টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও এক হাজার ৩৪ জনের দেহে, যা সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা খানিকটা কমলেও মৃত্যু হয়েছে সমানসংখ্যক মানুষের।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ১৫২ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন দুই হাজার ৩৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৭ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ২৫৬ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে আট হাজার ৬৩৪টি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আছে পাঁচ হাজার ৭৩৪ টি এবং ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৯০০টি। আইসিইউ শয্যা আছে ৩৩৫টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি। আইসিইউ শয্যা ও ডায়ালাইসিস ইউনিট বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৬৬৬ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৮৪ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৮৫ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩০ হাজার ৯৫৫ জনকে।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
চীনের উহান শহরে গত ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাসের কবলে। সবচেয়ে বেশি ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে ৪৩ লাখ। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৮৭ হাজারের বেশি। তবে সোয়া ১৫ লাখেরও বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। যদিও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ১০ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে দোকানপাট ও শপিংমলও।