করোনায় মৃত্যু ছাড়াল ৮শ’, শনাক্ত ছাড়াল ৬০ হাজার
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট মারা গেলেন ৮১১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮২৮ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৬০ হাজার ৩৯১।
শুক্রবার (৫ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন।
তিনি ৫০টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৬৪৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৮৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৮২৮ জন। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩০ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮১১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৬৪৩ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৮০৪ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ২৩ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে দুজন এবং বরিশাল ও রংপুর বিভাগে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ১৭ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। বয়সের দিক থেকে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন, ষাটোর্ধ্ব ছয়জন, সত্তরোর্ধ্ব দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন মারা গেছেন।
গত বৃহস্পতিবারের (৪ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ জন মারা গেছেন। ১২ হাজার ৬৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৪২৩ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে মৃত্যু। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর রেকর্ড আছে। এ তথ্য জানানো হয় ৩১ মে’র বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে দুই হাজার ৯১১ জনের, যা গত ২ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়।
শুক্রবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনার পরীক্ষার ভিত্তিতে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৬৫ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ৯৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৭৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন।
দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২৪৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৪৯৫ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪০ হাজার ১১৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৩১৯ জন।
দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান ডা. নাসিমা।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চীনের উহান শহর থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৯৩ হাজারেরও বেশি। তবে ৩২ লাখ ৬২ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।