প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি গবেষকরা। এজন্য রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় ফ্রন্টলাইনে থাকা চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ত্যাগের যেন শেষ নেই। এমনকি মারাও যাচ্ছেন অনেকে।
শুধু ইতালিতেই মারা গেছে শতাধিক চিকিৎসক। এছাড়া প্রায় প্রতিটি দেশেই করোনাযুদ্ধে হেরে চিকিৎসকদের লাশের মিছিল বাড়ছে। এছাড়া বিদেশে কর্মরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসকও মারা গেছেন করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে। সর্বশেষ মারা গেছেন পূর্ব লন্ডনে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী (ফয়সাল)।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন ও রেজা চৌধুরী নামে বাংলাদেশি দুই চিকিৎসক। তবে ডা. মঈন উদ্দীনই প্রথম কোনো বাংলাদেশি চিকিৎসক যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ দেশে মারা গেলেন। বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোরের দিকে তার মৃত্যু হয়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভোর ৬ টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন।
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন ডা. মইন। গত ৫ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ আসে। অবস্থায় অবনতি ঘটলে ৭ এপ্রিল তাকে সিলেট নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে পরিবারের সিদ্বান্ত অনুযায়ী তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
করোনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসকের পরিবারসহ নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
ADVERTISEMENT
মৃত্যুকালে দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে গেছেন ডা. মঈন।
৫ এপ্রিল ওই চিকিৎসকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল। তাকে ওইদিন রাতেই শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
চিকিৎসক মঈন নিয়মিত প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন এবং ওসমানী হাসপাতালেও ডিউটি করেছেন। তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়লে অন্যান্য চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে তার বাসা নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন করে পুলিশ।
গত ৭ এপ্রিল নিজ হাসপাতালের আইসিইউতে বেড না পাওয়ায় আলোচনায় আসেন এই চিকিৎসক। কারণ, সেখানে করোনা আক্রান্তদের জন্য কোনো স্বতন্ত্র আইসিইউ ছিল না।
তার সহকর্মীরা জানান, করোনা ধরা পড়ার পর থেকেই বাড়িতে ছিলেন তিনি। ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন দুপুরের দিকে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এজন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।
সিলেট মেডিকেলে তার আইসিইউ এবং বেড না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার পরিবার ও সহকর্মীরা। আক্রান্ত চিকিৎসকের এক স্বজন (যিনি নিজেও চিকিৎসক) জানান, দীর্ঘদিন বাসায় রেখে আক্রান্তকে তারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তার আইসিইউর প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটি সিলেটে সম্ভব হয়নি।