বরিশালের হিজলা উপজেলার কবিরাজের অপচিকিৎসায় রাসেল ঘরামী (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কবিরাজ ও তার ছোট ভাইকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা।
সোমবার (২৬ জুলাই) বিকেলে উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের চর মেমানিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাসেল ঘরামী ওই এলাকার মৃত আলমগীর ঘরামীর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন।
এ ঘটনায় আটক দুই ভাই হলেন শেখ ইমরান (২৫) ও শেখ ইসমাইল (২২)। তারা একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী গৌরবদি ইউনিয়নের বিশর গ্রামের কামাল শেখের দুই ছেলে।
শেখ ইমরান কবিরাজির নামে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় অপচিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তার এ কাজে ছোট ভাই শেখ ইসমাইল সহায়তা করতেন।
নিহত রাসেল ঘরামীর স্বজনরা জানান, বেশ কিছুদিন পেট ব্যথায় ভুগছিলেন রাসেল ঘরামী। পল্লীচিকিৎসকদের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে এসে সেবন করেন। এতে তার পেট ব্যথা কমেনি। অসুস্থতার কারণে কয়েক দিন ধরে রাসেল ঘরামী কথা কম বলতেন। একা থাকতে পছন্দ করতেন। বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির পরামর্শে তারা কথিত কবিরাজ শেখ ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সোমবার দুপুরে চিকিৎসার জন্য শেখ ইমরান ও শেখ ইসমাইল চর মেমানিয়া গ্রামে রাসেল ঘরামীর বাড়িতে আসেন। এসময় ইমরান ও তার ভাই ইসমাইল ঝাড়ফুঁক করে রাসেল ঘরামীকে জিনে ধরেছে বলে জানান। ইমরান চিকিৎসা করে ভালো করতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন। এতে রাসেল ঘরামীর পরিবারের সদস্যরা রাজি হন।
জিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজি চিকিৎসার নামে রাসেলকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন ইমরান ও ইসমাইল। একপর্যায়ে তারা গলাটিপে ধরেন। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে রাসেল ঘরামী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে পরিবারের সদস্যরা টেকেরহাটে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তিনি রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাসেল ঘরামীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শেখ ইমরান ও শেখ ইসমাইলকে ধরে গণধোলাই দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুই ভাইকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসীম কুমার সিকদার জানান, সন্ধ্যার দিকে রাসেল ঘরামীর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আটক শেখ ইমরান ও শেখ ইসমাইলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।