একজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, সচিবের কারাবাস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার নিগ্রহ। অর্থায়নে এগিয়ে এসেও প্রথমে এডিবি, এরপর বিশ্বব্যাংকের আবার পিছিয়ে যাওয়া। এমন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যাত্রা পদ্মা সেতুর।পদ্মা সেতুতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ জুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্বব্যাংক। কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগে ওই সময়ের সেতুসচিব মোশাররফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়, মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে।কিন্তু দেশি-বিদেশি সেসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের সেতু। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এরপর নানা বাধা পেরিয়ে ও নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তিন বছর দুই মাস ১০ দিনে সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলো। এতে দৃশ্যমান হলো পুরো ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মাসেতু। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে জোর গলায় সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছিলেন, কোন কাজে, কোন অস্বচ্ছতার সাথে আমি জড়িত নই। তবে তার বিরুদ্ধেই ওঠে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ।সেতুর অর্থায়নে শুরুতে আসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এরপর যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১২০ কোটি ডলার অনুমোদন করেও পরে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। এরপর বিশ্বব্যাংকের একটার পর একটা আবদার রক্ষার চেষ্টা করেও তাদেরকে ফেরানো যায়নি পদ্মায়।পরে, অর্থায়ন থেকে সংস্থাটির সরে যাওয়ার কারণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগের সময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে বার বার একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে চাপ দিচ্ছিল। এমনকি সৈয়দ আবুল হোসেনকেও চাপ দিচ্ছিল যাতে ওই কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হয়। তাহলে এখন যদি প্রশ্ন করি, বিশ্বব্যাংক কত শতাংশ টাকা খেয়ে ওই কোম্পানির জন্য তদবির করেছিল?’শেষমেশ বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টাকে। দেড় মাস জেল খাটেন সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি পদত্যাগই করতে হয় তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। দফায় দফায় তারা হাজিরা দিতে থাকেন দুদকে।তিনি বলেন, ‘দুদক যখনই আমাকে ডাকবে, তখনই পাবে। কারণ, আমি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’কিন্তু কল্পিত সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হতে সময় লাগেনি একদমই। কানাডার আদালতই ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেয়, দুর্নীতি হয়নি পদ্মায়।নয় বছরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে যে ক্ষতের জন্ম, শেষ পর্যন্ত মিথ্যের জাল ছিন্ন করে নিজের টাকায় সেতুর শেষ স্প্যানটি বসিয়েই তা সারালো বাংলাদেশ।