নাছির হত্যার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী ‘মাহালম’ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন

    0
    208

    নিউজ ডেস্ক, চট্টগ্রাম :: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী ডাকাত, মাহালম বাহিনীর প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী মাহালমের নেতৃত্বেই মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের ছেলে নাছিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এমন দাবি করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বোয়ালখালী কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে। তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এ দাবি করে অবিলম্বে মাহালমকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

    বোয়ালখালী তথা চট্টগ্রামের শীর্ষ চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাহালম বাহিনীর আত্যাচারে পুরো বোয়ালখালী তথা চরণদ্বীপবাসী অতিষ্ঠ। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর বিভিন্নসময় ভিন্নভাবে হামলা করে এই বাহিনী। মাহালম বাহিনীর প্রধান সন্ত্রাসী মাহালমসহ সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও মাহালমকে গ্রেফতার পূর্বক নাছির খুনের দায়ে ফাঁসির দাবীতে বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে আজ (৩রা জুন) বেলা ১২ টার সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো: হারুন মিয়া লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে তিনি জানান, মাহালম বাহিনীর নেতৃত্বে গত ১৫ মে রাত ১১টায় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আলী মদনের পূর্ব চরণদ্বীপস্থ সন্ত্রাসী মাহালমের নেতৃত্বে ক্রসফয়ারে নিহত ছইল্লা, মো: জসিম, হাছি মিয়া, মো: তৌহিদ, নাছির উদ্দিন, মো: নাছের ৬-৭জন অস্ত্রধারী নিয়ে বসতঘরটি ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘরের সামনের দরজার সম্মুখে দাড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মো: নাছির নিহত হন। নাছির গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন সন্ত্রাসীদের দিকে এগিয়ে গেলে তাকেও গুলি করে মাহালম বাহিনী। গুলিতে আলী মদনের বাম পা ঝাজরা হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মদন আলী এখনও পঙ্গুত্ব বরণের মত জীবন যাপন করছে। সন্ত্রাসীরা ঐ সময় জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে টানা হেচড়া করে আলী মদনের ছোট ছেলে মো: লোকমানকে ঘরের বাহিরে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি মারধর করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মদনের ছেলে লোকমান। গোলগুলির শব্দ শুনে এলাকার জনগণ চারদিক থেকে এগিয়ে আসলে মাহালম বাহিনীর স্বসস্ত্র ক্যাডারগণ গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।

    খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নিহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাছির উদ্দিনের পরিবার ও এলাকাবাসির সহযোগিতায় চায়। পুলিশ ঘটনাস্থল হতে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রসহ ২ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় সুনির্দিষ্ট হত্যা ও হামলার মামলা দায়ের হয়। পরে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে মাহালম বাহিনী। পুলিশ পাল্টা গুলি করলে ওই বাহিনীর সন্ত্রাসী ছইল্যা নিহত হয়।

    হামলায় আহত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা আলী মদন ও তার ছোট ছেলে মো: লোকমান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দিন অতিবাহিত করছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সন্ত্রাসী মাহালম তার বাহিনী নিয়ে এলাকায় স্বসস্ত্রে প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করছে। মুক্তিযোদ্ধা আলী মদনের পরিবার পুন:রায় হামলার আশঙ্কা করে ভয়ভীতির মধ্যে দিনযাপন করে আসছেন।

    সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই মাহালম বাহিনীর বিগত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী রাত ১০টার সময় বোয়ালখালী থানার শ্রীপুর গ্রামের আরেক মুক্তিযোদ্ধা শওকতের বাড়িতে ব্যাপক গোলাগুলির মাধ্যমে সন্ত্রাসী তান্ডব চালায়। ঐসময় ঘটনাস্থলে মুক্তিযোদ্ধা শওকতকে না পেয়ে তার বাড়িঘর ভাংচুর করে। ঐ সময় ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে মাহালম বাহিনীর শাস্তির দাবিতে বোয়ালখালীর বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রহস্যজনকভাবে মাহালম বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করে আসছিল।

    মাহালমকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই বাহিনী পুনরায় আলী মদনের পরিবারের উপর এই বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ছেলে নাছিরকে হত্যা করে। এই মাহালম বাহিনীর বিরুদ্ধে বিগত ৭বছর যাবৎ চরণদ্বীপ, খরণদ্বীপ ইউনিয়নসহ আশপশের এলাকার নিরীহ নির্যাতিত মানুষেরা বোয়ালখালী থানায় অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সমূহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাহালম তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। মাহালমের মাদক ব্যবসা অস্ত্রভাড়া দেওয়া এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, কর্ণফুলী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্ত্বলনের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে।

    হারুন কমান্ডার বলেন, চরণদ্বীপ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম ও মাহালমের মধ্যে এলাকার আধিপত্ত্ব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মতবিরোধ চলে আসছে। উভয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাদের দু’জনেরই সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এলাকার মানুষেরা দু’বাহিনীর চাঁপের মুখে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা মদনের পরিবারের উপর হামলা এবং হামলায় গুলিতে নাছির নিহত হওয়া ঘটনা পূর্বের আধিপত্ত্বের বর্হিপ্রকাশ। মাহালম বাহিনীর প্রধান মাহালমকে গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে আরও অসংখ্য নাছিরের প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

    সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‌্যাব প্রধান, ডিআইজিসহ প্রশাসনের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
    মাহালম বাহিনীর প্রধান মাহালমসহ সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলে বোয়ালখালী সচেতন নাগরিকদেরকে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। অবিলম্বে মাহালমকে আটকপূর্বক বিচারের আওতায় এনে নাছির খুনের দায়ে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান।

    সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা বন গোপাল দাশ, মুক্তিযোদ্ধা শরৎ চন্দ্র বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন প্রমুখ।