নান্নুর মৃত্যু : স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাইবে তদন্ত কমিটি

    0
    147

    মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে একমাত্র ছেলে পিয়াসের পর একইভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে জ্বলে-পুড়ে মৃত্যু হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর‌। ওই ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

    নান্নু পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়ে থাকতে পারেন- বিভিন্ন পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ তোলার পর তার স্ত্রী যেন দেশ ছাড়তে না পারেন সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

    নান্নুর রহস্যজনক মৃত্যুর পর ডিএমপির গুলশান বিভাগ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

    ওই কমিটির এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পেয়েছি যে, নান্নুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই অভিযোগ যেন সুষ্ঠু তদন্ত করা হয় সে তাগিদ বা অনুরোধও করা হচ্ছে।’

    ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নান্নুর স্ত্রী পল্লবীর একাধিক দেশ ভ্রমণে অভিজ্ঞতা ও ভিসা রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তিনি যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দেয়া হবে।’

    গুলশান বিভাগ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর নেপথ্যের রহস্য উদঘাটনে গুলশান বিভাগ পুলিশ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং সিআইডি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রত্যেকটি তদন্ত কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করছে গুলশান পুলিশ।

    ইতিমধ্যে সাংবাদিক নান্নুর বাড়ির ভিডিও ফুটেজ জব্দসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের পর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি।

    এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে গঠিত প্রত্যেকটি তদন্ত কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে গুলশান বিভাগ পুলিশ।’

    গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ফৌজদারি কোনো অপরাধ ঘটেছিল কি না- সেটি তদন্ত করছে। ফায়ার সার্ভিস আগুনের কারণ অনুসন্ধান করছে। তিতাস গ্যাসের কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল কি না- সেটা তদন্ত করছে সিআইডি এক্সপার্ট অপিনিয়ন। সবমিলিয়ে শিগগিরই একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

    তিনি বলেন, ‘আমরা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সব তথ্যই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করব আর তখনই স্পষ্ট হবে সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর কারণ।’

    উল্লেখ্য, আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার দশম তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত শুক্রবার (১২ জুন) ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন।

    সাংবাদিক নান্নুকে গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।

    এর মাত্র ছয় মাস আগে গত ২ জানুয়ারি ওই একই বাসায় বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাদের একমাত্র সন্তান মিউজিক ডিরেক্টর স্বপ্নীল আহমেদ পিয়াস (২৪) প্রাণ হারান। সে সময় ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু।