পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ

0
27

রাজশাহীতে গোদাগাড়ী থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলাম (৩২) এক মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গ্রামের রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি ইসাহাক আলী ওরফে ইসা (২৯) শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল মাহমুদের সামনে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতে পাঁচ পুলিশের হাতে রফিকুল নিহত হবার কথা জানায় বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইসার দেওয়া জবানবন্দীতে যেসব পুলিশ সদস্যের নাম এসেছে তারা সেই সময় গোদাগাড়ী থানায় কর্মরত ছিলেন।আসামি ইসাহাক আলী ইসার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দীতে রফিকুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন- গোদাগাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, এসআই আবদুল মান্নান, এসআই রেজাউল ইসলাম, কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম। ইসাহাক আলী ইসা গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মাদারপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে। ইসাহাক একজন মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে।    তবে এর আগে জামাল উদ্দিনের আদালতে বিচারিক হাকিমের সামনে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে  বজ্রপাতে রফিকুল মারা যাবার কথা জানায়।ইসা বলেন, রফিকুল ও তিনি টাকার বিনিময়ে হেরোইন পারাপার করেন। ২১ মার্চ রাতে তারা দুইজন হেরোইনসহ পদ্মার চর পার হওয়ার সময় বজ্রপাতে রফিকুল মারা যায়। আর সে পুলিশের হাতে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ ধরা পড়েন। নিহতের স্ত্রী রুমিসা খাতুন (২৬) গত ১৭ জুন বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আবদুল মালেকের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩২) এবং একই এলাকার আজাদ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিনকে (৩২) আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গত জুনে রাজশাহী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইতে স্থানান্তর হয়।  গত ২১ মার্চ রাতে গোদাগাড়ী থানার অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে যায়। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে আজাদ আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনকে (৩২) ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক করেন। থানায় ফিরে রাতেই পুলিশ জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার ও নিহত রফিকুলকে পলাতক আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করেন। পরদিন সকালে পলাতক আসামি রফিকুল ইসলামের লাশ পদ্মার চরে পাওয়া যায়।  পরে পুলিশ রফিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রামেক মর্গে পাঠায়। একই সাথে রফিকুল বজ্রপাতে নিহত হওয়ার কথা বলে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।       খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ১৭ জুন রফিকুলের স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলাটি আদালত গত ২৩ জুন পিবিআইকে হস্তান্তরের আদেশ দেন। ৭ জুলাই মামলার নথিপত্র পিবিআই গোদাাগাড়ী থানা থেকে বুঝে পান। এরপর তিনি রফিকুল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন। রাজশাহী পিবিআই-এর এসআই জামাল উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করছেন।

গত ২৮ অক্টোবর গোদাগাড়ীর মাদারপুর গ্রামের  রেজাউল ইসলামের ছেলে ইসাহাক আলী ইসা, একই গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (২৫) ও আজাদ আলীর ছেলে মাহাবুব আলীকে গ্রেফতার করেন। রাজশাহী পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে ইসাহাক আলী ইসা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানায় পুলিশের মারপিটের কারণে রফিকুল মারা যান। পরদিন ইসা ৫ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন।     আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইসা তার জবানবন্দীতে জানান, ঘটনার কিছুদিন আগে হেরোইন নেয়ার জন্য তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদের কাশেম নামের এক ব্যক্তিকে দুই লাখ টাকা দেন। কাশেম প্রথমে তাকে নকল হেরোইন পাঠায়। বিষয়টি ধরে ফেলাই কাশেম তাকে আসল হেরোইন পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন।   তবে ১০০ গ্রামের বদলে তিনি কাশেমের কাছ থেকে বাকিতে আরও ৪০০ গ্রামসহ মোট ৫০০ গ্রাম হেরোইন দাবি করেন। একই সঙ্গে ইসা কাশেমের মালামাল ধরিয়ে দেয়ার জন্য গোদাগাড়ী থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ মার্চ রাতে রফিকুল ও জামাল ভারতের মাদক ব্যবসায়ী কাশেমের দেওয়া হেরোইন নিয়ে নৌকা থেকে নেমে ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। ইসার পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে আগে থেকে ওঁত পেতে ছিল ৫ জন পুলিশ। এসময় দু’জনকেই ধরে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। ধস্তাধস্তি করায় রফিকুলকে বেধড়ক মারপিট করে তার কাছে থাকা হিরোইন নিয়ে নেয় পুলিশ। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।