আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই সমালোচনা করেন ঘরে বসে টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে, তারা ঘর থেকেও বের হয়না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় মহামারি দূর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন, সেই আহবানে যারা সাড়া দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে জেকেজি ও রিজেন্ট গ্রুপের অনিয়ম গুলো সরকারই উদ্ঘাটন করেছে। কোন পত্রিকার রিপোর্ট দেখে বা বিরোধী দল বলেছে এরকম অনিয়ম হচ্ছে সেকারণে এটি উদ্ঘাটন হয়নি। এখানে যাতে কোন ধরণের অনিয়ম দূর্নীতি নাথাকে সেজন্য সরকারই উদঘাটন করেছে। অবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আরম গ্রুপের উদ্যোগে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১’শটি হাইফ্লো নজুল ক্যানুলা প্রদান চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালকে কোভিড-১৯ হসপিটালে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এর উদ্বোধন ও কক্সবাজার জেলায় দুটি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান াতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম বিএমএ’র সভাপতি ডা. মুজিবুল হক, সাধারন সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, এসআলম গ্রুপের প্রতিনিধি আকিজ উদ্দিন প্রমূখ।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, এদেশে মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহর গুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহর অন্যতম। নানা প্রতিকুলতা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোর চেয়ে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার পৃথিবীর যে কয়টি হাতেগোনা দেশের মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম তৎমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অনেকে বলতে পারেন ইউরোপে বেশি এই অঞ্চলে কম। এই অঞ্চলেও বাংলাদেশে মৃত্যুর হার আমাদের উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও কম। এটি সম্ভব হয়েছে নিশ্চয়ই নেতৃত্বে গতিশীলতার কারণে।
তিনি বলেন, শুরুতে চট্টগ্রামে অনেক সঙ্কট ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে চট্টগ্রামে সেই সঙ্কট নেই। আইসিইউ নিয়ে হাহাকার ছিল। কিন্তু এখন আইসিইউ বেড খালি পড়ে আছে। হাইফ্লো নজুল ক্যানুলা স্বল্পতা ছিল, সেটিও সরকারি বেসরকারি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আমরা গুছাতে সক্ষম হয়েছি। ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। সিটি মেয়রও একটি আইসোলেশন সেন্টার খুলেছেন। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই ডাক্তার বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ চট্টগ্রামের অনেক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ও সংগঠক এগিয়ে এসেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য শুরুতে কোন কিছুই ছিলনা। করোনা ভাইরাস যে আসছে সেটিকে অস্বীকার করার চেষ্ঠা করেছিল চায়না। চায়নাতে যখন প্রথম শনাক্ত হয়, যে ডাক্তার করানো ভাইরাসের সংবাদ দিয়েছিল তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অন্যদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে সেই ডাক্তার নিজেই মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বলেন, আজকে আমরা বিভিন্ন উন্নত দেশ গুলোতে দেখতে পাচ্ছি, তারা করোনা ভাইরাসের কাছে কত অসহায়। তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সামর্থ কোন কিছুই কাজ করছেনা। আজকে বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমরা কি সমর সজ্জার জন্য বেশি ব্যয় করবো নাকি এধরণের আরো ভাইরাস ভবিষ্যতে আসতে পারে সেজন্য আমাদের সামর্থ রিসার্চ গুলো আরো বাড়াবো।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে এই ভাইরাসই শেষ ভাইরাস নয়, পৃথিবীর সমসাময়িক ইতিহাস যদি দেখি বহু ভাইরাস এসেছে অতীতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো করোনা ভাইরাসের কারণে একভাগ মিলিয়নের একটু বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। পৃথিবীতে যখন এক’শ কোটি জনসংখ্যা তখন পৃথিবীর পাঁচ ভাগ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে ভাইরাসের কারণে। ভবিষ্যতেও এরকম ভাইরাস আরো আসতে পারে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুরু থেকেই অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চীনের উহানে যখন করোনা ভাইরাস দেখা দেয় তখন সেখান থেকে বাঙ্গালীদের চাটার্ড বিমানে ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। বিদেশ তেকে যারা এসেছিল তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। অনেক ব্যবস্থা নেয়ার পরও করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এসেছে। পৃথিবীর অনেক দেশই মোটামুটি ব্যবস্থা নিয়েছিল তারপরও কোন দেশ নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেনি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানে স্ত্রী স্বামীর লাশ ধরছেননা, বাবার সৎকারে ছেলে এগিয়ে আসছেনা তখন চট্টগ্রামে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাশ দাফন ও সৎকারে এগিয়ে এসেছেন। আমার নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারা শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের লাশ নয় তারা হিন্দু বৌদ্ধসহ সকলের লাশ তারা সৎকার করছে। যেসব স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানান তথ্যমন্ত্রী।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ একজন প্রচার বিমূখ মানুষ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবসময় মানুসকে সহায়তা করেন, কিন্তু প্রচার করেননা তিনি। তার এই উদ্যোগ নিয়ে আমার সাথে ফোনে কথা হয়। আমি তাকে বরং পরামর্শ দিয়েছিলাম এসব কাজ প্রচার করতে যাতে অন্যরা উৎসাহিত হয় ও এগিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর অনেকেই এগিয়ে এসেছে, আরো অনেকেই এগিয়ে আসার কথা ছিল, আশাকরি তারাও এগিয়ে আসবেন, যারা এখনো হাত প্রসারিত করেনি, তারাও হাত প্রসারিত করবেন। তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারবো। #
ছবির ক্যাপশান :
১। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এস আলম গ্রুপের উদ্যোগে বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
২। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রান্তরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শিলালিপিতে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন হাসপাতালে সহায়তা কর্যক্রম উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।