প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা প্রভাবশালীর প্ররোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উচ্ছেদ

0
29

নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরীর পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে সরকার প্রদত্ত বাসস্থান থেকে প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিনা নোটিশে উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান স্কোয়াড। এসময় ন্যায় বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরীর ছোট ভাই নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শামছুল আলম চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ডিগ্রীর ছাত্র, তুখোড় ছাত্র নেতা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে ট্রেনিং নিতে ভারতে চলে যান। ট্রেনিং শেষে দেশে এসে চট্টগ্রামে রাউজানে ১ নং সেক্টরে যুদ্ধে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাউজানের আমির আলী হাটে তিনি যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমাদের পরিবারের উপর নেমে আসে সীমাহীন দূর্ভোগ। বড় ভাই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রামে আমাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাথার উপর কোন ছাদ না থাকায় আমার বাবা মরহুম বদিউল আলম চৌধুরী জাতির পিতা বরাবর একটি আশ্রয়ের আবেদন করেন। যুদ্ধে আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শামছুল আলমের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি প্রদান স্বরূপ জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান আমাদের পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে একটি জমি বন্দোবস্ত দেয়, যা ১৭৭, জাকির হোসেন রোড বাই লেইন, শাহী জামে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত।
উল্লেখ্য যে, এই জায়গা সরকার হতে বন্দোবস্ত পাওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্র সম্পত্তিটি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। যার নেতৃত্বে রয়েছে শিল্পপতি নাদের খান ও তার সহযোগীরা। তারা বিভিন্ন জাল দলিল বানিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এই সংঘবদ্ধ চক্র তাদের আর্থিক প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আসছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুন একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল আকস্মিক আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরকে এক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন। ঈদুল আযহার মাত্র ২-৩ দিন আগে এরূপ আকস্মিক উচ্ছেদে আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। আমরা উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেটকে আমাদের কাছে থাকা কাগজপত্র এবং আদালতে চলমান সিভিল কোর্ট অপর আপিল ২৫১/২৩২ মামলার কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তিনি তা দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমরা শহীদ পরিবার হিসাবে মানবিক দিক বিবেচনায় আমাদেরকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ চাইলেও তিনি তা আমলে না নিয়ে জোর পূর্বক উক্ত জায়গা থেকে বের করে দেন।
এতে আরও বলা হয়, জায়গাটি ছিলো এই শহরে আমাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই। সরকার কর্তৃক প্রদত্ব আশ্রয় হারিয়ে আমরা এখন নিরূপায়, আশ্রয়হীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। একটি সংঘবদ্ধচক্র এই সম্পত্তি কুক্ষিগত করার জন্যেই গোপনে জাল কাগজপত্র সৃজন করে এবং ডেপুটি কমিশনার চট্টগ্রামকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়। আমাদেরকে কখনোই কোন প্রকার নোটিশ দেওয়া হয়নি। আমরা এই জায়গায় দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বসবাস করে আসছি। উক্ত জমি নিয়ে সিভিল কোর্ট অপর আপিল ২৫১/২৩২ আদালতে বিচারাধীন আছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা এবং সমগ্র বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন করে তা বাস্তবায়েনের দাবী জানানো হয়।
এ সময় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরীর পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পারভীন সুলতানা ও সামিউল আলম চৌধুরী অনিক। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান স্কোয়াডের যুগ্ন-আহ্বায়ক আরাফাতুল মান্নান ঝিনুক, সদস্য-সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজিশ ইমরান, সিনিয়র সদস্য রকিবুল হাসান, নাজমুল হক ভূইয়া রাজিব, সূচিত্রা গুহ টুম্পা, আমিনুল ইসলাম, মো. তানুন চৌধুরী, কামরুল হক চৌধুরী, মিনহাজ উদ্দিন তাকিম, শায়েরুল আজম স্বপ্নীল, আশিষ দাশ রাহুল, সাইরাজ বিন আহমেদ, মো. নাহিয়ান প্রমুখ।###