স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট :: এস.বি পুণ্য গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শাহজাহান বাবলু পলাতক নয় প্রবাসী হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থান করছেন। দুবাইতে তিনি আছেন ২০১৪ সাল থেকে। (বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স) বা ম্যানপাওয়ার সম্পন্ন করার মাধ্যমে তিনি সেখানে যান। সেখানে তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। শাহজাহান বাবলুর দুবাই ছাড়াও সিঙ্গাপুরেও ব্যবসা রয়েছে।
বাংলাদেশে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ১) বিছমিল্লাহ মৎস্য হ্যাচারী, বিফ পেটেনিং এন্ড পোল্ট্রি কমপ্লেক্স। ২) এস,বি ফ্রিজিং কোল্ড স্টোর, ফিস এন্ড প্রসেসিং প্লান । ৩)এস,বি ক্রপ কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।৪)এস,বি এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৫)এস, বি বিল্ডার্স এন্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড। এছাড়া ফার্টি লাইজার উৎপাদন, কীটনাশক, বীজ সারা বাংলাদেশে সরবরাহ করে চলেছে এস বি গ্রুপ।
গত কয়েকদিন আগে শাহজাহান বাবলুর বিরুদ্ধে ভূর্তকির অর্থ দিয়ে বিদেশে বিলাস বহুল জীবন যাপন ও অর্থ পাচার মামলায় পলাতক বলে দু একটি গণমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিষয়টির সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তিনি একজন প্রবাসী । দুবাইয়ের বৈধ ভিসা নিয়ে তিনি সে দেশে অবস্থান করছেন। পূণ্য গ্লোড জুয়েলারী ট্রেডিং এল এল সি, পূন্য জেনারেল ট্রেডিং ও পূন্য ফুডস্টাফ ট্রেডিং নামক লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে তার বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয় নিয়ে একটি মামলা তদন্ত করছেন সিআইডি। পূর্বে ২০১২ সালে শাহজাহান বাবলু বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নং ৩৯/৪০। এ মামলা দুটি দীর্ঘদিন তদন্তের পর কোন অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় দুদক আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত মামলা দুটি খারিজ করে দেন ।
কমার্স ব্যাংক জানান শাহজাহান বাবলুর সাথে আমাদের লেনাদেনা রয়েছে ঠিকই। তবে যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেটা সঠিক নয়। টাকা পাচারের বিষয়টি ও ভিত্তিহীন। কমার্স ব্যাংক বলেন বড় কোন পত্রিকার ওপর মানুষের আস্থা থাকে বেশি, তবে আস্থাহীন সংবাদ প্রচার অগ্রহণযোগ্য ।
ভূর্তকির টাকায় বিদেশে বিলাস বহুল জীবন যাপন বিষয়ে গনমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের সত্যতা খুজতে গিয়ে
অনুসন্ধানে দেখা যায় শাহজাহান বাবলু বিদেশে রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা কমার্স ব্যাংক থেকে কোন ইন্সেন্টিভ বা ভূর্তুকি গ্রহণ করেনি এ পর্যন্ত। বিষয়টি যাচায় করলে স্বীকার করেছেন কমার্স ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। পক্ষান্তরে দেখা যায় শাহজাহান বাবলু গত ১৭,১৮,১৯ অর্থ বছরে জনতা ব্যাংক দুবাই শাখা থেকে বাংলাদেশে জনতা ব্যাংক লোকাল অফিস ঢাকায় তার নিজস্ব একাউন্টে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৪১ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩২ হাজার ২ শত ৫০ টাকা।
টেরাকোটা টাইলস রপ্তানি কমার্স ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেই বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কমার্স ব্যাংক দিল কুশা শাখার ম্যানেজার আশীষ কুমার গোস্বামী। তিনি বলেন টেরাকোটা টাইলসের নামে বিদেশে কোন অর্থ পাচার হয়নি। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কাছে আমরা ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, এস বি এক্সিম বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে টাইলস বা কোন পণ্য রপ্তানি হয়েছে কিনা । চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তদন্ত সাপেক্ষে এ কোম্পানির পক্ষে কোন পণ্য রপ্তানি হয়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনের কপি ব্যাংকে সুরক্ষিত আছে।কোন মালামাল রপ্তানি না হলেও বিপরিতে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে কমার্স ব্যাংকে এস বি এক্সিম বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানির নামে এক কোটি নয় লক্ষ ডলার এসেছে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৯১ কোটি টাকা। ফলে এ বিষয়টিকে কিভাবে টাকা পাচার বলা যায়?
কমার্স ব্যাংকের ডিএমডি কাজী রেজাউল করিম এ প্রতিবেদককে জানান শাহজাহান বাবলু কমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন ১৭৩ কোটি টাকা। ব্যাংকে তার পূর্বের লোন ছিল ৪৮ কোটি টাকার মতো। ১৭৩ কোটি টাকার লোনের বিপরীতে পূর্বের ৪৮ কোটি টাকা কেটে নেয়া হয় । ঋণ নেওয়ার পরে তিনি ব্যাংকে পুন তফশিলের জন্য জমা করেছেন আরো ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। বর্তমানে ব্যাংক তার কাছে পাওনা রয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন শাহজাহান বাবলু সাথে কমার্স ব্যাংকের শুধুমাত্র ১৬৫ কোটি টাকার লেনদেনই রয়েছে। গণ মাধ্যমে প্রচারিত ৩৯০ কোটি টাকার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কাজী রেজাউল করিম আরও বলেন শাহজান বাবলুর বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি মামলা সিআইডি তদন্ত করছে।মূলত এই মামলার বিষয় বস্তু হচ্ছে সিঙ্গাপুরে পূণ্য গোল্ড এন্ড ডায়মন প্রাইভেট লিমিটেড ও পুণ্য সুপার মার্কেট প্রাইভেট লিমিটেডে নানা ধরনের এক্সেসরিজ কেনার জন্য তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার কমার্স ব্যাংকের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েছিলেন।পরে ওই ডলার সমূহ প্রয়োজন না হওয়ায় সিঙ্গাপুরের দুটি ব্যাংকের একাউন্ট থেকে সেম একাউন্টে তা ফেরত দেন শাহজাহান বাবলু।
গনমাধ্যমে প্রচারিত অভিযোগ নিয়ে শাহজাহান বাবলু সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরোর একজন সদস্য হয়ে ২৩-৯ -২০১৪ সালে বিদেশ গমন করি। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে প্রবাসে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। তিনি বলেন বিদেশে উপার্জিত টাকা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে অথবা গাড়ি-বাড়ি করলে সেটা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আমার মত হাজারো প্রবাসী উপার্জন করে প্রবাসে গাড়ি-বাড়ি করেছেন। কিন্তু দু একটি মিডিয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সেটাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। যা আমার আত্মসম্মানের দারুন ভাবে আঘাত হেনেছে।তিনি বলেন ১৯৮৯ সাল থেকে আমি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছি। গত দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম ও সততার মধ্য দিয়ে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচলনা করে এই জায়গায় এসেছি। তিলে তিলে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। আমি একদিনে লাফ দিয়ে এই জায়গায় আসিনি। ভুল তথ্য দিয়ে দু একটি গন মাধ্যম আমাকে যেভাবে ধ্বংস করতে চাচ্ছ তা উদ্দেশ্য মূলক।
শাহজাহান বাবলু আরো বলেন ২০১৭-১৮/ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জনতা ব্যাংক দুবাই শাখা হইতে জনতা ব্যাংক লোকাল অফিস ঢাকায় ৪১ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকা রেমিটেন্স প্রেরণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের আমি একজন গর্বিত অংশীদার। তিনি বলেন ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ব্যবসার কাজে লাগানোর জন্য আমি ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আর প্রয়োজন না হওয়ায় ফেরত পাঠিয়েছি সিঙ্গাপুরে যে ব্যাংক গুলোতে ডলার জমা হয়েছিল সে ব্যাংক গুলো থেকেই বাংলাদেশে কমার্স ব্যাংকের সেম একাউন্টে টাকা ফেরত পাঠানো হয়। তাছাড়া দুটি গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে ২০০ কোটি প্লাস ১৯০ কোটি মোট৩৯০ কোটি টাকা অডি ঋণ গ্রহণ করেছি। মূলত মূল স্থিতি ঋণ ১৬৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে ৮ কোটি ১০লক্ষ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় জমা করেছি। কমার্স ব্যাংক থেকে নেয়া ১৬৫ কোটি টাকা থেকে কমার্স ব্যাংক দিলকুশা, কৃষি ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস ঢাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হেড অফিস কমপ্লেক্স ব্রাঞ্চ , ইউসিবিএল ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চ, ও প্রিমিয়ার ব্যাংক দিলকুশা কর্পোরেট ব্রাঞ্চে মোট ১০২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করি। অবশিষ্ট টাকায় ফাইটিরাইজার আমদানি করি এবং বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাজে ব্যবহার করি। তিনি বলেন আমি দেশের টাকা দেশে রেখেছি , বিদেশে পাচার করিনি। পত্রিকায় উল্লেখিত সংবাদে বাজার দর থেকে অধিক মূল্যে পণ্য রপ্তানি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছি বলে বলা হয়েছে। তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।কমার্স ব্যাংক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ বিষয়টি তদন্ত করে কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি।
তিনি বলেন কোন পণ্য রপ্তানি করা না হলে তাহলে কিভাবে অর্থ পাচার হয়। অপর দিকে বিদেশি ক্রেতারা কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখায়১ কোটি ৯ লক্ষ মার্কিন ডলার অগ্রিম প্রেরণ করেন ।এ অর্থ থেকে বাংলাদেশ সরকার ৫০ লক্ষ টাকার অধিক ভ্যাট আদায় করেন। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সমূহ তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ বলে দাবী করেছেন ।