জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাতে যোগ দেয়া বিএনপির একমাত্র প্রতিনিধি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রশ্ন তুলেছেন, সাড়ে পাঁচ মাস পর আসলেই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দরকার ছিল কি না?
বৈঠক শেষে বেরিয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির এ নেতা। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার পর রাজধানীর ফরেন একাডেমিতে চলে সর্বদলীয় এ বৈঠক।
ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা আমাদের সবচেয়ে জরুরি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, তা গণঐক্যে রূপান্তরিত করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে যেন চর্চা করতে পারি এবং ঐক্য ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিতে পারি, তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছে তা যেন বিনষ্ট না হয়, ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছিলেন, আমরা এসেছি, রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে মতামত-পরামর্শ যা দেয়া দরকার তা দিয়েছি।
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি কী পরামর্শ বা মতামত দিয়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে বিভিন্ন দল আলোচনা করেছে, পরামর্শ দিয়েছে। আমরা প্রশ্ন করেছি, সাড়ে পাঁচ মাস পর আসলেই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দরকার ছিল কি না? যদি দরকার থাকে, সেটার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কী— সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যাতে ফাটল না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কোনো রাজনৈতিক দলিল ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়, সেটিকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু সেটি প্রণয়ন করতে গিয়ে যাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, পরামর্শ নেয়া হয়, সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের অনুরোধ করেছি। যাতে আমাদের মধ্যে ঐক্যে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়, বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেগুলো আলাপ হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সর্বদলীয় বৈঠকের আমন্ত্রণের পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে বৈঠকে বিএনপি মতামত দেবে না বলে দলটির সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা-ই ওঠে এলো সালাহউদ্দিন আহমদের কথায়।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল আজকের বৈঠকে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছিল। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সকালে বলেছিলেন, বৈঠকে বিএনপি যাবে কি না এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে অংশ নেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আসার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওঠে আসে, কেবল জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনের গণঅভ্যুত্থানের দিলগুলো নয়, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলনের, ত্যাগের স্বীকৃতিও চাইবে বিএনপি। এজন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একমত হয়ে তা করতে হবে মত দেয় বিএনপি নেতারা।
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা চায় ঘোষণাপত্রে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর নেতৃত্ব পরিস্কারভাবে উল্লেখ থাকুক। নয়া সংবিধানেরও পক্ষে তারা। তবে, বিএনপি নতুন করে সংবিধান লেখার পক্ষে নয়, সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান, ঘোষণাপত্র ইস্যুসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের।
আজকের বৈঠক নিয়ে বিএনপির কাছাকাছি সূরে কথা বলেছে দলটির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরীক দলগুলোও।
এছাড়া, ১২ দলীয় জোট, বাম জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বৈঠকে অংশ নেয়নি। ১২ দলীয় জোট এই বৈঠককে প্রহসনের বৈঠক বলেছেন। আর আড়াই ঘণ্টা আগে নামবিহীন খুদে বার্তায় আগামীকালকের জন্য (বৈঠক আজ হয়েছে) আমন্ত্রণ জানানোয় তাতে যায়নি সিপিবি।
মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তায় এই বৈঠকের আমন্ত্রণ করার বিষয়ে অন্য রাজনৈতিক দলও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।