মুহাম্মদ জাহিদ হাসান বোয়ালখালী::
বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নের স্হায়ী বাসিন্দা সুজন দেওয়ানজী নামের এক যুবক গত ৬ জুন রোজ শনিবার নিজেকে করোনা রোগী ভেবে জলিল আম্বিয়া কলেজের ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার সৎকারে প্রতিবেশীর সহযোগিতা না পেয়ে সুজনের বড় ভাই অপু দেওয়ানজীর আবেগঘন স্ট্যাটাস ভাইরাল হয় তিনি তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,
টানা ৮ ঘন্টা বুকে জড়িয়ে রেখেছি ছোট ভাইয়ের লাশ! বুকে জড়িয়ে রেখেই থানা পুলিশের ঝামেলা পেড়িয়ে এম্বুলেন্সে লাশ এনেছি, ছোট ভাইয়ের শেষ গোসল দিয়েছি, সৎকার করেছি। আত্মীয় বন্ধু পড়শী কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ নয়!
অপরাধ ছিলো সহজ সরল অভিমানী ছোট ভাইটি নিজে করোনা আক্রান্ত ভেবে মানসিক অস্থিরতায় ৫ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলো। অথচ ২/৩ বার ডাক্তার দেখিয়েও সিন্ড্রম অনুযায়ী তার করোনা নয় বরং ব্রঙ্কাইটিস থেকে বুকে কফ ও কিছুটা শ্বাসটান ছিলো। এমনকি আগের রাতে তাকে আমি নিজেই সুস্থ শক্ত দেখে এসেছি। তবে কথাবার্তায় কিছুটা মানসিক অগোছালো মনে হয়েছে।ভাই অামার মাত্র ৬/৭ মাস আগে গ্রামের পড়ে থাকা বিশাল পাকা বাড়িটাকে পুনঃ অারো রূম বাথরুম এড করে দৃষ্টিনন্দন করে রিনোভেশন করে স্ত্রী কন্যা সমেত বাস শুরু করে। হয়তো অভ্যস্ত ছিলোনা গ্রাম্য কুটনামিতে।
অামার ভাই করোনা পজিটিভ ছিলোনা। তবুও কেউ এগিয়ে অাসেনি সৎকারে, শোকের সান্তনায়। অামি, আমার স্ত্রী, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, আমার ভাগিনারাতো ছিলোই- কাকার সৎকার করেছে আমার ছোট্ট বাবাই।
বাবাইকে বললাম- ‘বাবা কাকার লাশ ধরলে তুমি আক্রান্ত হবে কিনা আমি নিশ্চিত নই, তুমি কি সৎকার করতে চাও?’ বাবাই বললো- ‘আমার কাকা, অবশ্যই করতে চাই!’
সন্তান সম ছোট ভাইয়ের লাশ বুকে জড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অসহায়ের মতো কাটানো কতটা কষ্টের, এই লাশ কতটা ভারী ছিলো চাইনা অার কারো জানা হোক।
আপনারা/তোমরা যারা অামার অাত্মীয়, স্বজন, বন্ধু, পড়শি- একটু যদি আসতেন- অন্তত দূরে দাঁড়িয়ে দেখতেন- অাপনাদের দেখে অামি যদি একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারতাম- অাপনাদের কি খুব বেশি ক্ষতি হতো?
অামি আমার বাবাইকে শুধুই একজন ভালো মানুষ বানাতে চেয়েছি, মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছি। মানবিকতা বিহীন লম্বা অায়ুর চেয়ে মানুষকে ভালোবেসে একদিন বেঁচে থাকাই শ্রেয় মনে করি।
অাজ ৫ দিন হয়ে গেলো। সুজনের অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শেষ। অামরা কেউই অাক্রান্ত হইনি, কোন সিন্ড্রমও দেখা যায়নি। সুস্থ অাছে বাবাই।
কারো করোনা হলো কিনা নিশ্চিত নাহয়ে যারা এমন অমানবিক অাচরণ করলেন, তারা অন্তত অামার ছোট্ট বাবাইর কাছে লজ্জিত হবেন কি??
এই আপনাদের নিয়েই যদি হয় সমাজ- এমন সমাজে না থাকার সিদ্ধান্ত আমার বোকা ভাইটার কি ভুল ছিলো?
করোনাকাল কি অামাদের সতর্ক হতে শিখাচ্ছে নাকি ঘৃণা করতে? দীর্ঘ জীবন পেতে গিয়ে মানবিকতা হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষ গুলোর সাথে অামার সুস্থ বাবাই কি করে একই সমাজে বাস করবে?
প্লিজ একটু লজ্জিত হবেন কি?
অপু দেওয়ানজীর কথায় আমাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না আমরা কতদূর নিচু মনমানসিকতা পোষন করলে এরূপ আচরণ একজন মানুষের পক্ষে কিভাবে সম্ভব!
সচেতন নাগরিকের দাবি করোনা রোগী অথবা করোনা আক্রান্ত লাশকে অবহেলা নয় বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মানবতার পরিচয় দেয়া।