সংসদের ৩০০ জনকে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ, এমপিরা পরীক্ষার বাইরে
সংসদে দায়িত্বরত প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এমন সংসদ সদস্যদের (এমপি) এই ভাইরাস পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। তাদের সংস্পর্শে আসতে পারেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও অধিবেশন কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কর্মকর্তা, ক্যামেরাপারসন, সংসদের কমিশন ও কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অংশ নেবেন এমন ব্যক্তি এবং তাদের সংস্পর্শে থাকবেন এমন স্ব স্ব শাখা-অধিশাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা করে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সংসদ মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার আরিফুল হক শনিবার (৬ জুন) জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কতজনের করা হবে, তার প্রকৃত সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রতিনিয়ত তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে। তবে প্রায় তিনশ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার জন্য সংসদ সদস্য মেম্বারস ক্লাবে একটি বুথ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে নমুনা নিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে অধিবেশনে অংশ নেয়া এমপিদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে না বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।
তিনি বলেন, ‘সংসদে যাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার দরকার ছিল তাদেরটা করাচ্ছি। এছাড়া অনেকে নিজ নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করাচ্ছেন।’
এমপিদের পরীক্ষার ব্যাপারে চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। কারণ আজকে টেস্ট করলাম কালকে যে পজেটিভ হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে? তবে নিজেদের সেভ করার জন্য টেস্ট করলে ভালো। আমরা কীভাবে বলি?’
তবে এমপিদের করোনা পরীক্ষা না করায় সংসদে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত ছয়জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় কর্মরত চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এজন্য সংসদ যোগ দেবেন এমন এমপিদেরও করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জামালপুর-২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মো. মোস্তাফিজুর রহমান (সপরিবার), চট্টগ্রাম-৬ আসনের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল করোনায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে শহীদুজ্জামান সরকার ও এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী করোনাকে জয় করেছেন।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বাসায় কর্মরত চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে সংসদের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু শুধু আমাদের করোনা নেগেটিভ হলে কী হবে? সংসদ সদস্যদেরও করোনা পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ তারা জনসাধারণের সঙ্গে বেশি মেশেন। তাই আমাদের করোনা নেগেটিভ হলেও আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।’
আগামী ১০ জুন শুরু হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন বাজেট উত্থাপন হবে। এটি পাস হবে ৩০ জুন। বাজেট অধিবেশন ঘিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনেকগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সংসদের একাধিক সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, বাজেট অধিবেশন চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এর কার্যদিবস হতে পারে মাত্র সাতটি। করোনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনটি মুলতবি রেখে স্বল্প সময় চালানো হবে। অধিবেশন কক্ষে বসার সময় যেন নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকে সে অনুযায়ী তালিকা করে এমপিদের ফোন দেয়া হবে। যারা ফোন পাবেন শুধু তাদেরই যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
এই অধিবেশনের মাধ্যমে যাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ সংসদের কাছে ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৩ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে।