প্রায় তিন মাস পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আবাসিক হলের আসন বরাদ্দ দেওয়া শেষে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৪তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্তমতে, ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক হলে বরাদ্দের জন্য শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করবেন। এই আবেদন চলবে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। যাচাই-বাছাই শেষে ৩ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। পরে ৫ অক্টোবর থেকে হল খুলবে।
সভা শেষে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, মেধার ভিত্তিতে হলে আসন দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যেন নিগৃহীতের শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করে একটি কমিটি গঠনের জন্য করবেন উপাচার্য। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ কমিটি গঠন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে গত বছর ১ জুলাই থেকে। ওই দিন থেকেই পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি করছিলেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট এক জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। এ সভায় ১৮ আগস্ট আবাসিক হল ও ১৯ আগস্ট ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। দাবির মুখে দায়িত্ব ছাড়েন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের, সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে ও মো. সেকান্দর চৌধুরীসহ ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মও স্থবির হয়ে যায়। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি প্রক্টরিয়াল বডি, হলের প্রাধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন করে নিয়োগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নথি অনুসারে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৭ হাজার ১৩৯। এসব শিক্ষার্থীর থাকার জন্য হল রয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে চালু আছে ১২টি। চালু থাকা হলের মধ্যে ছাত্রদের সাতটি, বাকি ৫টি ছাত্রীদের। ছাত্রীদের হলে বরাদ্দপ্রক্রিয়া চলমান। নিয়ম মেনে ছাত্রদের হলগুলোতে সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেয়। তখন প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আবেদন করেন ১ হাজার ৬০ শিক্ষার্থী। আবেদন করলেও শিক্ষার্থীরা বৈধভাবে হলে উঠতে পারেননি। তবে ছাত্রীদের হলের বরাদ্দপ্রক্রিয়া চলমান।