অ্যাভিগানের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা জাপানের

    0
    209

    কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ অ্যাভিগানের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাপান। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এই রোগের এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন কিংবা ওষুধ আবিষ্কার না হলেও এর আগে চীনের চিকিৎসকরা অ্যাভিগান প্রয়োগে কার্যকর ফল পেয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন।

    করোনার চিকিৎসায় ওষুধটির প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের ২০টি দেশে ফাভিপিরাভির ড্রাগ অ্যাভিগান বিনামূল্যে সরবরাহ করবেন বলে জানান।

    বুধবার জাপানের ফুজিফিল্মের ওষুধ প্রস্তুতকারক তোয়ামা কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট কেনজি সুকেনো ইনফ্লুয়েঞ্জার অ্যান্টিভাইরাল ফাভিপিরাভির ড্রাগ অ্যাভিগানের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

    অ্যাভিগানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ফুজিফিল্মকে সহযোগিতা করবে ওয়াকো পিউর কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া এই ওষুধটির কাঁচামাল ও অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানের জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে।

    বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত মার্চের তুলনায় উৎপাদন আড়াই গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি মাসে এক লাখ রোগীর পুরো কোর্সের ওষুধ উৎপাদন করা হবে। মার্চে কোম্পানিটি তাদের বর্তমান চলমান উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করে।লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে উৎপাদনকৃত এই ওষুধ আগামী জুলাইয়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। তবে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ লাখ রোগীর জন্য অ্যাভিগান উৎপাদন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

    গত ৭ এপ্রিল জাপান সরকারের জরুরি অর্থনৈতিক প্যাকেজ অনুযায়ী, দেশটির সরকার ২০ লাখ রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে; এমন পরিমাণের অ্যাভিগান মজুদের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে জাপান সরকারের অনুরোধে ফুজিফিল্ম ওষুধটির উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

    জাপানি এই কোম্পানি বলছে, অ্যাভিগান এক ধরনের অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ; যা মানবদেহে ভাইরাসের বংশবিস্তারে বাধা দেয়। এর আগে ইবোলা ভাইরাস চিকিৎসায় অ্যাভিগানের জেনেটিক গোত্রীয় ফ্যাভিপিরাভির’র প্রয়োগ করেছিলেন গবেষকরা। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ভালো ফল পেয়েছিলেন তারা। তবে মানবদেহে এর কার্যকারিতা ঠিক কেমন-তা এখনও প্রমাণিত নয়। তবে গবেষকদের দাবি, মানবদেহে অ্যাভিগানের প্রয়োগে অপেক্ষাকৃত ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

    সম্প্রতি ওষুধটি চীনের উহান ও শেনঝেন অঞ্চলের অন্তত ৩৪০ জন করোনা রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। গত ১৮ মার্চ চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ঝ্যাং শিনমিন বলেন, ‘এটি খুবই নিরাপদ ও চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে।’

    সেই সময় জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানায়, শেনঝেন অঞ্চলে যেসব রোগীকে ফাভিপিরাভির দেয়া হয়েছিল তারা মাত্র চারদিনের মধ্যেই করোনামুক্ত হয়েছেন। বিপরীতে, অন্য ওষুধ ব্যবহারকারীদের সুস্থ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১১ দিন। এক্স-রেতেও দেখা গেছে, ফাভিপিরাভির ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯১ শতাংশের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অন্য ওষুধ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এর হার ৬২ শতাংশ।

    চীনের মতো জাপানেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে স্বল্প ও মাঝারি মাত্রায় উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের চিকিৎসায় ফাভিপিরাভির ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে জাপানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এই ওষুধ গুরুতর উপসর্গ সম্পন্ন রোগীদের চিকিৎসায় খুব একটা কার্যকর হয়নি। একই ফলাফল দেখা গেছে এইচআইভির ওষুধ লোপিনাভির ও রিটোনাভিরের মিশ্রণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।

    ফুজিফিল্ম বলেছে, করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের অংশ হিসেবে প্রথম দুই ধাপ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে অ্যাভিগান। এখন তারা আশা করছেন, মানবদেহে প্রয়োগেও এর আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে