আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী, রোহিঙ্গাদের কাজ দেওয়ার সুযোগ নেই 

    0
    13

    সম্প্রতি কাতার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জাতিসংঘের আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি কথা বলেছেন কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু, আগামী নির্বাচন, তত্ত্ববাধায়ক সরকার এবং রাজনীতিতে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক। শনিবার (১১ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সাক্ষাতকারের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জাবাবে তিনি বলেন, ‘যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ শুরু হয়। তখন তারা পাঠিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আছে। আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দেই…তাদের আসতে দেই। তাছাড়া মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা তাদের বাসস্থান এবং চিকিৎসা দেই।’

    ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার পর তাদের ফেরত পাঠাতে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর যাতে চাপ সৃষ্টি করে তার জন্য সব ধরনের কাজ করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আমলে নেয়নি দেশটি। 

    সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক আগুন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুব ভালো নয়। রোহিঙ্গারা একে-অপরের সঙ্গে মারামারি করছে। তারা মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।’

    সাক্ষাতকারের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় রোহিঙ্গাদের কাজ করার ব্যবস্থা বা সুযোগ দেওয়া হবে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অনেক সুবিধা দিলেও এটি তিনি করতে পারবেন না। কারণ সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরাই ভালো নেই। এছাড়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে থাকলেও, তারা অন্য দেশের নাগরিক। বাংলাদেশে হলো তারা শরণার্থী। 

    বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ যা প্রায় চীনের সমান ছিল। বর্তমানে ঢাকার জিডিপির পরিমাণ ভারতের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমি একটি কথা বলতে পারি… আমাদের মানুষ খুবই ভালো।

    তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত ছাড়া আমরা সম্পদের মাধ্যমে খাদ্য বাড়ানো ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরপর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা…চাকরির ব্যবস্থা করা। আমি যা করেছি তা হলো সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হ্যাঁ সরকারি খাতও আছে। কিন্তু আমি প্রায় সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা আমাদের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি, বিদেশিদের, সঙ্গে নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইস্তেহারে বলেছিলাম, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দেব। এখন পুরো বাংলাদেশে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমরা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছি। আমি আপনাকে বলতে পারি এখন প্রত্যেকটি বাড়িতে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’

    আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। আর এ কারণেই দেশ এমন অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। 

    প্রধানমন্ত্রীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমাদের খুবই বাজে অভিজ্ঞতা আছে। এরপর বিএনপির ব্যাপারে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিল তখন সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তারা এমনকি আমাকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে চেয়েছে। আমার দলের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো বিচার ও তদন্ত হয়নি। তাদের দুর্নীতি শুধু দেশ নয়, বিদেশি দেশগুলোও জানত। তারা আসলে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। আর তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। আমি আপনাকে একটা কথা বলতে পারি আমি মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি।’