চামড়ার ক্রেতা কম, ন্যায্য দাম দেয়া হচ্ছে দাবি আড়তদারের

    0
    12

    রাজধানীর বেশির ভাগ মানুষের পশু কোরবানি শেষ। এখন চলছে চামড়া বিক্রির চেষ্টা। তবে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও কোরবানি দেয়া অনেকে গরু-ছাগলের চামড়া বিক্রির জন্য ক্রেতা পাচ্ছেন না। অনেকে আবার মাদরাসার চামড়া সংগ্রহকারীদের খুঁজে বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন। আর যারা ক্রেতা পাচ্ছেন তারা আবার অল্প দামে চামড়া বিক্রি করছেন।

    আকার ভেদে মহল্লায় মহল্লায় গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে আড়তদাররা বলেছেন, তারা সরকার নির্ধারিত দাম দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করছেন। ক্ষেত্র বিশেষে দাম বেশি দেয়া হচ্ছে।

    রামপুরার বাসিন্দা আয়নাল বলেন, ‘দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা গরুটির চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ২৫০ টাকায়। এর বেশি দাম পেলাম না। চামড়ার টাকার হক এতিম-দুস্থদের। এ টাকা মাদরাসায় দান করে দেব। তাই ক্রেতাদের উচিত চামড়ার সঠিক দাম দেয়া। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে এখন পানির দরে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে এতিম-দুস্থদের হক নষ্ট হচ্ছে।’

    এদিকে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. জসিম সকালে গরু কোরবানি দিয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি একটি মাদরাসায় চামড়া দিয়ে দেন।

    এ বিষয়ে বলেন, ‘চামড়া বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যেত তা দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করে দেয়া হতো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। তাই একটি মাদরাসায় দান করে দিয়েছি।’

    রামপুরা অঞ্চল ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করা মৌসুমি ব্যবসায়ী হানিফ বলেন, ‘গতবছর চামড়া কিনে লস খেয়েছি। এবার আর লস খেতে চাই না। কম দামে পেলে কিনব, না পেলে রিস্ক নেব না।’

    এদিকে পোস্তার কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারী আকরাম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম বেশি। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সে দামেই চামড়া সংগ্রহ করছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম একটু বেশিও দিচ্ছি।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা চামড়া কেনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখানে কেউ চামড়া নিয়ে আসলে ফিরে যাবে না। সবাই ন্যায্য দাম পাবেন। তবে চামড়ার মান ভালো থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নিয়ে আসা উচিত। বেশি সময় চামড়া ফেলে রাখলে মান নষ্ট হয়ে যায়।’

    আরেক চামড়া ব্যবসায়ী হায়দার বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম পাওয়া যাচ্ছে না পোস্তায় এসে এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা তার থেকে দাম বেশি ছাড়া কম দিচ্ছি না।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছর যে চামড়া সংগ্রহ করি তার বেশিরভাগ আসে কোরবানির পশু থেকে। কোরবানির পশু বিশেষ করে ঢাকায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়ার মান বেশ ভালো। যে কারণে আমরাও চামড়া সংগ্রহের জন্য এ সময়টার অপেক্ষায় থাকি।’

    বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘আমাদের কাছে যারা আসছেন সবাই ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। এখানে (পোস্তা) দাম কম দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

    মহল্লায় দাম না পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মহল্লা থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করেন তারা সময় ব্যবসায়ী অথবা মহল্লার ছেলে। তারা কম দামে চামড়া কিনছেন এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি। তবে আমাদের এখানে দাম কম দেয়া হচ্ছে না। যারা চামড়া নিয়ে আসছেন আমরা তাদের ন্যায্য দাম দিয়ে দিচ্ছি। গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দাম বেশি দেয়া হচ্ছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকলে আমাদের এখানে যত চামড়া আসুক আমরা সংগ্রহ করব এবং ন্যায্য দাম দেব। চামড়ার গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য সবার উচিত রাত ২টা-৩টার মধ্যে চামড়া নিয়ে আসা। চামড়া সংগ্রহের জন্য আজ সারারাত আমাদের আড়ত খোলা থাকবে।’

    এদিকে এ বছর রাজধানীর জন্য লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।