চাল উদ্ধার : ডিলারকে বাদ দিয়ে মামলার আসামি দিনমজুর

    0
    350

    মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটিউচি গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে সরকারি গুদামের ৪ বস্তা চাল ও খাদ্য অধিদফতরের ৮টি খালি বস্তা উদ্ধার করে পুলিশ। গত শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে ওই এলাকার মুজাম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে চাল ও বস্তাগুলো উদ্ধার করা হয়।

    এর আগেরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় একই গ্রামের দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের বাড়ি থেকে ৮ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে পাওয়া চালগুলো স্থানীয় ডিলার মো. সুলেমান কালোবাজারে বিক্রির জন্য লুকিয়ে রেখেছিলেন। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন সকালে ডিলার এগুলো ওই বাড়িতে পাঠান। ডিলার সুলেমানের বাড়ি ভাটাউচি গ্রামে।

    এদিকে চাল উদ্ধারের ঘটনায় ডিলার সুলেমানের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে শনিবার (১১ এপ্রিল) দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ 
    উঠেছে, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা অভিযুক্ত চাল ডিলার সুলেমানকে বাঁচাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটাউচি গ্রামের আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে সরকারি ৩০ কেজি ওজনের ৮টি বস্তা চাল পাওয়া যায়। ঘটনার খবরটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদকে জানানো হয়। তিনিসহ খাদ্য অফিসের কোনো কর্মকর্তাই এদিন কর্মস্থলে না থাকায় ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নিরাপত্তা প্রহরী মাছুম আহমদকে। খবর পেয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর উপস্থিতিতে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে। এরপর নিরাপত্তা প্রহরী স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে স্টক রেজিস্টার নিয়ে চলে আসেন।

    এর পরদিন শনিবার বিকেলে স্থানীয় ডিলার সুলেমানের বাড়ির অদূরে মুজম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ৪টি প্লাস্টিকের বস্তায় আরো ১২২ কেজি চাল ও খাদ্য অধিদফতরের ৮টি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়। চাল ও খালি বস্তা উদ্ধারের পর খাদ্য কর্মকর্তা ডিলারের গুদামে তালা দিয়ে বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক আখতার হোসেন রহিমের কাছে চাবি বুঝিয়ে দেন। এইরাতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপখাদ্য পরিদর্শক প্রাণেশ লাল বিশ্বাস বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা করেন।

    সরেজমিনে এলাকায় গেলে চাল রাখা বাড়ির মালিক দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের স্বজন ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) ডিলার সুলেমান দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে ৩০ কেজি ওজনের ৮ বস্তা চাল পাঠান। তখন শুক্কুর বাড়িতে ছিলেন না। বাইরের কোথাও দিনমজুরের কাজ করছিলেন। এসময় শুক্কুরের স্ত্রী তার কার্ডের দুই বস্তা চাল ছাড়া বেশি চাল রাখতে রাজি হননি।

    পরে ডিলার সুলেমানের সাথে শুক্কুরের স্ত্রী কথা বললে, তিনি (সুলেমান) চালগুলো রাখতে বলেন। দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে চাল রাখার ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পরদিন লোকজন প্রশাসনকে খবরটি জানায়। এরপর ওই বাড়ি থেকে ৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।

    দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের স্ত্রী হাজিরা বেগম বলেন, আমার কার্ডের দুই মাসের ২ বস্তা চাল একসাথে পেয়েছি। আমরা গরীব মানুষ। প্যাচ বুঝি না। বাড়তি আরো ৬ বস্তা চাল সুলেমান ভাই তার লোকজন দিয়ে আমার ঘরে পাঠান। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় রাখতে চাইনি। চালগুলো তিনি পরে নেবেন বলে আমাকে জানান। পরেরদিন সরকারি লোকজন এসে চালগুলো নিয়ে যায়।

    এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাল ডিলার মো. সুলেমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

    বড়লেখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদ বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সিলেটে বাসায় ছিলাম। প্রথমদিন নিরাপত্তা প্রহরীকে পাঠাই ঘটনাস্থলে। স্থানীয় ডিলারের স্টক রেজিস্টার নিয়ে আসতে বলি। শনিবার ওই গুদামে খোঁজ নিতে গিয়ে খবর পাই আরো কিছু চাল ও খালি বস্তা পাওয়া গেছে। এগুলোও পুলিশের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডিলারের কাগজপত্র মিল পাওয়া গেছে। যার ঘরে সরকারি চাল পাওয়া গেছে তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আইনে তাই বলে। এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে থানার পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেবে। আমরাতো আর মামলা তদন্ত করতে পারি না।

    কিন্তু ডিলারের সম্পৃক্ততা থাকার পরও কেন তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি জানতে চাইল এই কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই-না। মামলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আসামি করা হয়েছে।

    এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, এটা এখন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন উপ-পরিদর্শককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে যারাই জড়িত থাকুক, তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরকে তদন্তের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।

    এদিকে এলাকার কয়েজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্লাস্টিকের বস্তায় চাল আর পাশেই খালি বস্তা উদ্ধারের ঘটনা পরিকল্পিত কিছু হতে পারে! তারা ডিলারের সাথে শক্তিশালী কারো ব্যক্তিগত বিরোধে এমন ঘটতে পারে বলে দাবি করছেন।

    তাদের দাবি যারা এমন সংকটে চাল নিয়ে এই কাণ্ড করেছে তাদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সামনে আনা উচিত।