‘ছিঁটেফোটা ঘটনা সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নষ্ট করে না’

    0
    12

    দু’একটি ছিঁটেফোটা ঘটনা সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের আন্তরিকতার সম্পর্ক বিনষ্ট করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

    বুধবার (২৬ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরে রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংগঠনের নবীন-প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে কেক কাটেন মন্ত্রী।

    হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দু’একটি ছিঁটেফোটা ঘটনা সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের যে আন্তরিকতার সম্পর্ক, সেটি বিনষ্ট করতে পারে না। কেউ স্বীকার করুক আর না বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ১২ বছর আগে শোনা যেতো- মা আমাদের একমুঠো ভাত দেন, এখন আর তা নেই। এখন আর আকাশ থেকে কুড়েঘর খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, এখন আর ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না, খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’

    তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো প্রাইভেট চ্যানেল ছিলে না। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রাইভেট চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ ৩৪টি প্রাইভেট চ্যানেল সম্প্রচারে, আরও ১১টি সম্প্রচারের অপেক্ষায়। শত শত অনলাইন এখন পরিচালিত হচ্ছে, পত্রিকার সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। গণমাধ্যমের এই বিস্তৃতির ফলে সাংবাদিকদের কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে কিছু ভূঁইফোড় অনলাইন এবং কিছু পত্রিকার ডিক্লারেশন আছে, যেগুলো সাংবাদিকতা করে না, সেখানে অনেকে সাংবাদিক হিসাবে কার্ড নিয়ে সাংবাদিকতা করে না। তাদের কারণে মূলধারার সাংবাদিকদের বদনাম হয়। এখানে একটি শৃঙ্খলা আনা দরকার।’

    তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে শুরু থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা যেভাবে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটি একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে নয়, সদস্যদের সকল প্রয়োজনে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এমন একটি জায়গায় এসেছে, যে সব রিপোর্টারদের ভরসার জায়গা রয়েছে।’

    তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকগুলো ধাপ আছে, অনেকগুলো পদ আছে। কিন্তু একজন রিপোর্টার যে কাজগুলো করেন, সেটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টারের রিপোর্টার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের হাতে একটি ক্ষমতা আছে, তাদের কলমের ক্ষমতা যে কতো বড়, সেটা হয়তো তিনি নিজেও অনুধাবন করতে পারেন না। যার কাছে ক্ষমতা নেই, তাকে ক্ষমতাবান করতে পারেন তারা।’

    ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাংবাদিকবন্ধব সরকার। আমাদের সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে অনেক কাজ করেছে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে। করোনাকালে সাংবাদিকদের যে সহায়তা করা হচ্ছে, সেটি আশপাশের কোনো দেশে করা হচ্ছে না। একইসঙ্গে করোনাকালে এককালীন সহায়তা দেয়া হয়েছে। তথ্য কমিশন তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য গঠিত হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জায়গাটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাদ্দ দিয়েছেন। জায়গাটি নিয়ে জটিলতা ছিল, সেটি নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাধান করেছেন। আমরা মনে করি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে গণমাধ্যম। সুতরাং গণমাধ্যমের বিকাশ রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই দরকার। সে কারণেই লেখার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন।’

    অনুষ্ঠানে অন্যদেরে মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ডিআরইউ’র সভাপতি মুরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

    এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রঙিন বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় চত্ত্বরে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বিএনপি মহাসচিব অতিথিদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।

    ডিআরইউ’র বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ঢোল, ঝুমুর নিয়ে শতাধিক সদস্য এতে অংশ নেন। এ সময় সবার পরণে ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডিআরইউর লোগো সংবলিত টি-শার্ট।