ত্রাণ কেলেংকারিতে বহিস্কৃত চেয়ারম্যান আবছারের বিরুদ্ধে প্রকল্প আত্মসাতের অভিযোগ

    0
    317

    কেনি চক্রবর্তী, হাটহাজারী :: ত্রান কেলেঙ্কারির অভিযোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বহিস্কৃত চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ৪০ টি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে তার পরিষদের নির্বাচিত মেম্বারগণ। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান নুরুল আবছার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তাদেরকে না জানিয়ে তার ইচ্ছে মতো প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন না করে টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত করেছে। তারা সুনিদিষ্ট প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। (৩ মে) মির্জাপুর ইউনিয়নের সংখ্যাঘরিষ্ট (৯ জন) ইউপি সদস্যরা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে এই অভিযোগ আনেন।

    অভিযোগে দেখা গেছে, সাধারণ বা নিয়মিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৩ টি, এডিপি/এডিপি (রাজস্ব) প্রকল্পের মধ্যে ৫টি, এলজিএসপি প্রকল্প ২টি, নিজস্ব রাজস্ব প্রকল্প ৬টি এবং টিআর/কাবিখা/কাবিটার মধ্যে ৫টিসহ মোট ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। এই প্রকল্পগুলোর সর্বমোট বরাদ্দ ছিল প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।
    এই ৪০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই আত্মসাতের করেছে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাময়িক বহিস্কৃত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবছার। এমনটাই অভিযোগ করেছেন তার পরিষদের মেম্বারগণ। এলাকার এই উন্নয়ন বরাদ্দ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা জেলা প্রশাসক কিংবা দুদকের মাধ্যমে এর সুরাহা চেয়েছেন। সম্প্রতি ত্রাণ আত্মসাৎ এবং ত্রাণ দিতে ডেকে নিয়ে ছবি তোলার পর এলাকাবাসী থেকে ত্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনায় দেশব্যাপি সমালোচিতন হন এই চেয়ারম্যান।


    অভিযোগের নথি এবং থানা প্রকল্প কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেখা গেছে, নিয়মিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মির্জাপুর ওয়ার্ড নং-২ এর অধীনেে হাজী সফর আলী সড়কে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ১ লাখ টাকা, একই ওয়ার্ডের আব্দুল জলিল (ঘুন্টি ফকির) মসজিদের ফ্লোরে টাইল্স নির্মাণ, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মোহাম্মদ আলী ফকির মাজার সংলগ্ন কবর স্থানে গাইড ওয়াল নির্মাণ ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর ৫ ওয়ার্ডের নুর আহম্মদ সড়কে ব্রিক সলিন নির্মাণ (রেল লাইনের পূর্ব অংশ ) ৫০ হাজার টাকা, তিন ওয়ার্ডের হাজী সফর আলী সড়কের পাকা ড্রেন নির্মাণ ২ লাখ টাকা, ওয়ার্ড নং-০২ ্এর মির্জাপুর হযরত মুহাম্মদ আলী শাহ ফকির সড়কের উত্তর অংশে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণে ২ লাখ টাকা, ওয়াডা নং-০২ এর মির্জাপুর গুচ্ছ গ্রাম সড়কের মধ্যম অংশ ব্রিক সলিন নির্মাণে ২ লাখ টাকা, ওয়ার্ড নং-০২ এর হাজী সফর আলী সড়কের মরা খালে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ ২ লাখ টাকা। ওয়ার্ড নং-০৭ এর চারিয়া আঞ্চলিক বিশ্ব ইজতেমার মাঠ সংষ্কার কাজ ২ লাখ টাকা। হাটহাজারী উপজেলা আন্ত: ইউনিয়ন ও পৌরসভা ফুটবল টূর্ণামেন্টের ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় বাবদ ২ লাখ। চার নম্বর ওয়ার্ডের আহাম্মদ মেম্বরের নতুন বাড়ী সড়কে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণে ৫০হাজার টাকা। এক নম্বর ওয়ার্ডে অগ্নিবীণা ক্লাবে আসবাবপত্র সরবরাহে ২ লাখ টাকা। দুই নম্বর ওয়ার্ডের উদ্দীপন ক্লাবে আসবাবপত্র সরবরাহ ২ লাখ টাকা। দুই নম্বর ওয়ার্ডের দানা মিয়া বাড়ী সড়কে ব্রিক সলিন নির্মাণে ২ লাখ টাকা। চার নম্বার ওয়ার্ডের মতিলাল চৌধুরী বাড়ী সড়কে ব্রিক সলিন নির্মাণ ২ লাখ টাকা। ছয় নম্বর ওয়ার্ডেও চারিয়া অছি উদ্দিন মিস্ত্রী বাড়ী সড়কের গাইড ওয়াল নির্মাণ ও রিফেয়ারিং ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বৃত্তি অনুষ্ঠান ব্যয়, ২ লাখ টাকা। চারিয়া ৯নং ওয়াডের চারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর অবকাঠামো সংষ্কার ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর জগন্নাথ সড়কের দ্বীন বন্ধুর বাড়ীর পার্শ্বে নির্মাণকৃত ড্রেন রক্ষার্থে রাস্তার সাইড ভরাট ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর হাজী সফর আলী সড়কের নির্মাণকৃত ড্রেন রক্ষার্থে রাস্তার সাইড ভরাট, ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর বাদশাহী সড়কের নির্মাণকৃত ড্রেন রক্ষার্থে রাস্তার সাইড ভরাট ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর মুহুরীহাট বাজারের পুরাতন ইউ.পি কার্যালয় মেরামত ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর বড়ুয়া পাড়া নেপাল উকিলের বাড়ী সড়কে কালবার্ট নির্মাণ, ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা।


    এছাড়া এডিপি/ এডিপি (রাজস্ব) এর প্রকল্পগুলোর মধ্যে মির্জাপুর আব্দুল, জলিল ঘুন্টি শাহ এবতেদায়ী মাদ্রাসা সড়কে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর আব্দুল জলিল ঘুন্টি শাহ এবতেদায়ী মাদ্রাসায় আসবাবপত্র সরবরাহ ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর কালা বাদশা পাড়া নূরাণী মাদ্রাসায় গভীর নলকূপ স্থাপন ১ লাখ টাকা। চারিয়া দেয়াং পাড়া সড়কের পূর্ব অংশ ব্রিক সলিন নির্মাণ ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের কালবার্ট মেরামত ১ লাখ টাকা।
    এছাড়া এলজিএসপি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মির্জাপুর হাজী সফর আলী সড়কের পাকা নালা নির্মাণ ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর বাদশাহী সড়কে আন্দা দিঘী সংলগ্ন স্থানে কালবার্ট নির্মাণ ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।


    এছাড়া নিজস্ব রাজস্ব এর প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, মির্জাপুর ডাঃ রবীন্দ্র লাল সড়কের কলবার্ট নির্মাণ ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর ওবাইদুল্লাহ নগর জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় আসবাবপত্র সরবরাহ ১ লাখ টাকা। মির্জাপুর গাউছিয়া আব্দুল জলিল ঘুন্টি শাহ (রঃ) হেফজখানা ও এতিমখানা উন্নয়ন ২ লাখ টাকা। মির্জাপুর হযরত আব্দুল জলিল ঘুন্টি শাহ (রঃ) এর শৌচাগরের ফ্লোর ও টাইল্স নির্মাণ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের কিলবার্ট নির্মাণ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সরকারহাট বাজার সংলগ্ন মির্জাপুর হাজী সফর আলী সড়কের ভাঙ্গা অংশ মেরামত ১ লাখ টাকা।


    এছাড়া টিআর/কা-বি-খা/কাবিটা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, চারিয়া ৬নং ওয়ার্ডের মদ্দেশ্বরী মায়ের মন্দির উন্নয়ন ৪৫ হাজার টাকা। মির্জাপুর মরহুম আব্দুল খালেক বাড়ী সড়কে মাটি ভরাট ও উন্নয়ন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মির্জাপুর আব্দুল মান্নান একাডেমীর মাঠ ভরাট ৫৯ হাজার টাকা। মির্জাপুর হযরত মুহাম্মদ আলী শাহ (রঃ) বাড়ী সড়কের সাইড ভরাট ৫৮ হাজার টাকা। মির্জাপুর হযরত মুহাম্মদ আলী শাহ কবরস্থান সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৭৪ হাজার ১৬৮শ টাকাসহ মোট চল্লিশটি প্রকল্পে সর্বমোট ৬৪ লাখ ৩৩, হাজার ১৬৮ টাকার কাজ বাস্তবায়ন না করেই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

    অভিযোগকারী মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গাজী মোহাম্মদ আলী হাসান জানান, সুনিদির্ষ্ট চল্লিশটি প্রকল্পের ব্যাপারে আমরা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ট মেম্বারগণ ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি, যে প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে আমরা কোনভাবে অবগত নই। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নই হয়নি।

    ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না এবং বাস্তবায়নই হয়নি।

    ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেনও একই ভাবে বলেন, আমরা এপ্রকল্পগুলোর ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত চাই।
    এব্যাপারে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের মোবাইলে বার বার ফোন করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
    উল্লেখ্য, ত্রাণ কেলেংকারি বা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত ১২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নুরুল আবছারকে বহিষ্কার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।