বিনিময় হারের উপর শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়

    0
    18

    A24 News :: বিনিময় হারের উপর শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। করোনার কারণে বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। বিনিময় হারের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে বৈদেশিক বিনিময় কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে।
    এর বড় কারণগুলো হচ্ছে পর্যটন শিল্প ব্যাহত হওয়া, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিটেন্স কমে যাওয়া ইত্যাদি। এর সঙ্গে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে এ বছর বৈদেশিক ঋণের কিস্তি শোধ ও সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার জমা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া। একই সময়ে বিশ্ববাজারে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মানও কমে গেছে, এখন ডলারের জন্য গুনতে হয় ২০১ রুপি।

    এ প্রসঙ্গে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ডা: প্রিয়াঙ্গা দুনুসিংহে জানান, ”কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃত্রিম নি¤œ বিনিময় হার চালু করছে। ব্যাংকারের ব্যাংক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে আইনি ক্ষমতা আছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক লেনদেনযোগ্য সঠিক বিনিময় হার ঠিক করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিতে পারে।”

    আইনগতভাবে ক্ষমতার ব্যবহার করেই তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের এই মূল্যমান নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদেশ দিচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যংক আমাদানিকারক, রাপÍানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিময় হারের প্রভাব কমাতে বিশেষ নিয়ম চালু করেছে। এ নিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে; বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরবর্তী ক্রেডিট প্রদানের উপর বিধিনিষেধ, ডলারের রসিদ রুপিতে পরিবর্তনের নিয়ম ইত্যাদি। ডা: প্রিয়াঙ্গা দুনুসিংহে আরো বলেন, ”কালো বাজারে ডলারের মূল্য বেড়ে গিয়েছে। আমদানিকারকরা এ বর্ধিত হারে আমাদানি করছে। একবার যদি আমদানিকারকরা তাদের ঋণের খাতা খোলে তাহলে সরকারের অফিসিয়াল এক্সচেঞ্জের অধীনে বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এ কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেন কারণ বিনিময় হারের অবমূল্যায়নের অনুমতি না দিয়ে তা কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।”
    তবে এসব পরিবর্তন ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় গ্যাস, অপরিশোধিত তেল, চিনি, দুধের গুঁড়া প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, যা দ্বীপ দেশটিতে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এসবের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি তীব্রভাবে বাড়ছে।
    কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চলমান এসব বিধিনিষেধের কারণে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে তাদের পণ্য খালাস করতে পারছে না এবং পণ্য স্তুপ করে রাখছে। ফলে বন্দরে বাড়ছে স্তুপকৃত পণ্যের চাপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের এমন আচরনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির সংসদ জনাব তিসা আত্তানায়েকে, ”যদি এই প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা হয়, আমরা আগামী বছরের মধ্যেও আমাদেও প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি আমদানি করতে পারব না। এটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই কারণেই অপরিশোধিত তেল এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী আমদানি করা সম্ভব নয়, যা মজুদ পণ্যের ঘাটতি তৈরী করছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে।”
    শ্রীলঙ্কান সরকার এখন কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।