মানসিক নির্যাতনে আহমদ শফীর মৃত্যু হয়েছে, দাবি সংবাদ সম্মেলনে

    0
    8

    মানসিক নির্যাতনের কারণে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর ছেলেদের অনুসারী আলেমদের একটি অংশ। এই অংশের অনেকেই আগে হেফাজতের কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন। তাঁরা বলছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা, জীবনের শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন মানসিক নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আহমদ শফীর মৃত্যুরহস্য উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

    আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী আল মাদানী। সংবাদ সম্মেলন অবশ্য ডাকা হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে।

    লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি চিহ্নিত উগ্রগোষ্ঠী ছাত্র-শিক্ষকদের জিম্মি করে মাদ্রাসায় অরাজকতা সৃষ্টি করে। সেই উগ্রগোষ্ঠীর কয়েক শ সদস্য এখনো হাটহাজারীতে অবস্থান করছে। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে রেখে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

    আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে নালিশি মামলা করেছেন তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামলা করার পর থেকেই মঈন উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধমকি ও জীবননাশের ভয় দেখানো হচ্ছে। আহমদ শফীর মৃত্যু যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে তো কারও আতঙ্কিত হওয়ার কথা না। কিন্তু মামলা করার পর বিশেষ মহল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

    মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটিকে ‘মামা-ভাগনের সিন্ডিকেটের অবৈধ কমিটি’ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়িত্ব ছিনিয়ে নেওয়া এবং আহমদ শফীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মাসখানেক পর হেফাজতে ইসলামের নামে মামা-ভাগনে অবৈধ কাউন্সিল করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি অবৈধ কমিটি ঘোষণা করেছে। এই কমিটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এই কমিটিকে ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখ্যান করা ঘোষণা দেওয়া হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আহমদ শফীর মৃত্যুরহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের শাস্তি; তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা; আহমদ শফীর পরিবারের সদস্য ও তাঁর অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান; আহমদ শফীর রেখে যাওয়া অঙ্গনগুলো থেকে বিরোধীদের অপসারণ করা।

    সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আহমদ শফীর আরেক ছেলে আনাস বিন আহমদ শফী (আনাস মাদানী), আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলার বাদী ও আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।

    শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী। একই সঙ্গে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় শুরা কমিটি। এরপর অসুস্থ আহমদ শফীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয় এবং ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি।

    আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের সাবেক কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছিলেন যে আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে।

    অভিযোগকারী এসব নেতা শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী এবং সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁরা কেউ হেফাজতের নতুন কমিটিতে পদ পাননি।
    আহমদ শফীর মৃত্যুর ৩ মাস পর গত ১৭ ডিসেম্বর তাঁকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলায় হেফাজতের ৩৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, ‘মানসিক নির্যাতন এবং চিকিৎসা না পেয়ে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু হয়।’