সংসদের ৪৩ কর্মকর্তা, ৮২ আনসার করোনায় আক্রান্ত

0
172

আসন্ন বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে সংসদের কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষায় ৪৩ জনের রেজাল্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে। অথচ তাদের অধিকাংশের শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না।

করোনা পজিটিভ হওয়াদের অনেকেই স্পিকারের দফতরে অবাধে যাতায়াত করতেন। অধিবেশন চলাকালীন অনেকেরই সংসদ কক্ষে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল।

আজ সোমবার (৮ জুন) সংসদ ভবনের সংসদ সচিবালয় কমিশনের ৩১তম সভা এবং পরে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দায়িত্বরত ৮২ জন আনসার সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সংসদে কর্মরত তিনজন পুলিশ সদস্যেরও করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে।

সংসদের ৪৩ কর্মকর্তাসহ বিপুল সংখ্যক আনসার ও পুলিশ সদস্যের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে সংসদে কর্মরত বাকিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আগামী ১০ জুন থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিবেশন চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা

এরই অংশ হিসেবে সংসদে দায়িত্বরত প্রায় সাড়ে ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়। সোমবার তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা শেষ হয়। কিন্তু ওই অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এমন সংসদ সদস্যদের (এমপি) করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি

সংসদ মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার আরিফুল হক সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, সংসদের ৪৩ কর্মকর্তার শরীরে আমরা করোনা পজিভিট পেয়েছি। এর মধ্যে আজ সোমবার ১১ জনের শরীরে, গতকাল রোববার ১৬ জনের শরীরে এবং শনিবার চারজনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়।

এদিকে, গতকাল রোববার (৭ জুন) আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (যোগাযোগ) মেহেনাজ তাবাসসুম রেবিন জানান, আনসার বাহিনীর করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮২ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত।

সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, সংসদে আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মোবাইলে ‘করোনা পজিটিভ’ জানিয়ে মেসেজ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আমর্স তাদের তালিকা ধরে ফোন দিচ্ছেন। তাদের সংসদে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। আজও সংসদ সচিবালয়ের ৩১তম কমিশন বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল এমন কয়েকজন কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়। পরে তারা বৈঠকে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার জন্য সংসদ সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট মেম্বারস ক্লাবে একটি বুথ তৈরি করা হয়। সেখানে নমুনা নিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অধিবেশনে অংশ নেয়া এমপিদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে না বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সংসদে যাদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার দরকার ছিল তাদের করাচ্ছি। এছাড়া অনেকে নিজ নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করাচ্ছেন।’

এমপিদের পরীক্ষার ব্যাপারে চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। কারণ আজ টেস্ট করলাম কাল যে পজেটিভ হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে? তবে নিজেদের সেভ করার জন্য টেস্ট করলে ভালো। আমরা কীভাবে বলি?’

এদিকে এমপিদের করোনা পরীক্ষা না করায় সংসদে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত সাতজন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় কর্মরত চারজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এজন্য সংসদ যোগ দেবেন এমন এমপিদেরও করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।

সংসদ সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জামালপুর-২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল, চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মো. মোস্তাফিজুর রহমান (সপরিবার), চট্টগ্রাম-৬ আসনের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শহীদুজ্জামান সরকার ও এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী করোনাকে জয় করেছেন।

এ বিষয়ে সংসদের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু শুধু আমাদের করোনা নেগেটিভ হলে কী হবে? সংসদ সদস্যদেরও করোনা পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ তারা জনসাধারণের সঙ্গে বেশি মেশেন। তাই আমাদের করোনা নেগেটিভ হলেও আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।’

আগামী ১০ জুন শুরু হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন বাজেট উত্থাপন হবে। এটি পাস হবে ৩০ জুন। বাজেট অধিবেশন ঘিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনেকগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে