‘২০২১ সালে সহিংসতায় ১০০ প্রাণহানি, সাংবাদিক নির্যাতনও উদ্বেগজনক’

0
14

বিদায়ী বছরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দেশজুড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এসব ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বিদায়ী বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে হামলা ও নির্বাচনী সহিংসতাকে আশঙ্কাজনক বলে উল্লেখ করেছে। দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ছিল উদ্বেগজনক।

মানবাধিকার নিয় কাজ করা সংস্থাটি বলছে, ‘২০২১ সালে দেশে বিরাজমান সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল লক্ষণীয়ভাবে উদ্বেগজনক। নির্বাচনী ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ১০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বছরজুড়ে সাংবাদিক নির্যাতনও ছিল উদ্বেগের।’

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থার পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী বছরজুড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন, উপাসনায়ে ভাংচুরের ঘটনা অব্যহত ছিল। এসময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৫ জন। ১৩৮টি ঘরবাড়িতে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উপাসনালয়ে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে ১২০টি। ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চারটি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় হামলায় ২০২১ সালে নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪৯ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, অক্টোবরে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে। ওই মাসে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা পালনকালে তাদের উপর সুপরিকল্পিত ও নিরবচ্ছিন্ন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসব চলাকালে কুমিল্লায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর জেরে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী নোয়াখালী, রংপুরসহ ১৯ জেলায় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় পুলিশ ও হামলাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংস্থা থেকে জানানো হয়, বছরের প্রথম থেকেই উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনসহ দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে সহিংসতামুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, উৎকন্ঠা, সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের মাত্রা নতুনভাবে যোগ হয়েছে।

নির্বাচনী সংঘাত, সহিংসতা ও নানাবিধ অনিয়মের কারণে স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়েছেন। এসব নির্বাচনে অন্তত ১৫৬টিতে চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনগুলো প্রহসনে পরিণত হচ্ছে এবং প্রশ্নবিদ্ধ এসব নির্বাচন ক্রমাগত জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। যা দেশের গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি বলে এমএসএফ মনে করে।

সংস্থাটি আরও জানায়, জানুয়ারি থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সহিংসতার ১৬৭টি ঘটনায় কমপক্ষে ঘটনায় ৯১ জন নিহত হয়েছেন। ১০০ জন গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহত হয়েছেন এক হাজার ৮১৫ জন।

নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ২১ জন প্রতিপক্ষের গুলিতে এবং ৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন। নিহতরা ভোটে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সমর্থক বা কর্মী। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, যার সংখ্যা ৪৯। এ মাসেই নরসিংদীতে নিহত হয়েছেন ১১ জন।

সংস্থাটি বলছে, বিদায়ী বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও গুলিবিনিময়ে ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও হেফাজতে ১১ জন মারা গেছেন। একই সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন হয়েছেন ৫৩ জন। বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন ১১ জন।

সংস্থার তথ্যানুসন্ধান এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক ২০২১ সালে গুমের অভিযোগ কিছুটা কম থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ২০২১ সালের চিত্র ছিল উদ্বেগজনক। এই বছর একজন নিহতসহ ১৩৬ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন। নিপীড়ন, হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত ৫৭ জন।