করোনা আতঙ্কে এলেন না স্বজনরা, হিন্দু বৃদ্ধার সৎকারে মুসলিমরা

    0
    165

    ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভায় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ নারী মারা যাওয়ার পর করোনা আতঙ্কে স্বজনরা তার সৎকারে অনীহা প্রকাশ করায় প্রতিবেশি মুসলিমরা এগিয়ে এসে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

    করোনা-আতঙ্কে সেই মৃতদেহ সৎকারের অনুমতি দিচ্ছিলেন না দেয়নি উলুবেড়িয়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের শ্মশান কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিপদে পড়ে যান মৃত বৃদ্ধার ছেলে। লকডাউনে আত্মীয়রাও আসতে পারছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে তিনি পাশে পেয়ে যান প্রতিবেশি কয়েকজন মুসলিমকে। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, তারাই শেষ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যান মৃতদেহ।

    হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠ ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ পাল (৬২) বাগনান এলাকার বাসিন্দা। ব্যবসা সূত্রে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে উলুবেড়িয়ার সিজবেড়িয়ায় থাকতেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শনিবার রাতে মারা যান তিনি।

    এরপর রবীন্দ্রনাথের ছেলে তন্ময় আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়। তন্ময় যে এলাকায় থাকেন, সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস বেশি। বাবার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পাশে দাঁড়ান সেই সংখ্যালঘু মুসলিমরাই।

    কিন্তু বিপত্তি বাধে অন্যত্র। উলুবেড়িয়ার দু’টি শ্মশানে দাহ করার জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তন্ময়। যোগাযোগ করা হয় উলুবেড়িয়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে শতমুখী শ্মশানও সৎকারে রাজি হচ্ছিল না। তবে অনুরোধের পর অনুমতি মেলে।

    এই সময়ে মানবধর্মের এক নতুন দিক দেখেছেন তন্ময়। হিন্দু রীতি মেনে মুসলমান সঙ্গীদের পাশে নিয়ে রোববার বাবার সৎকার করেছেন তিনি। তন্ময় বলেন, ‘দুর্দিনে মানুষ চেনা যায়। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, শেষ দিনে যে সঙ্গী হয়, সেই বন্ধু। তারা হয়তো আমার আত্মীয় নন। তবে নিজের আত্মীয়দের থেকে অনেক কাছের হয়ে গেলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

    এত প্রশংসার কোনও কারণ দেখছেন না তন্ময়ের শ্মশান-সঙ্গী সিজবেড়িয়ার শেখ ইলিয়াস, শেখ ইউনুস আলীরা। বলেন, ‘তারা আমাদের পাড়ার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে নিজের স্বজনরা আসতে পারেনি। আমরা ছাড়া আর পাশে কাকে পাবেন তারা। এখানে সম্প্রদায় কোনও বিষয় নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় কথা।’