ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম চালু হচ্ছে দেশের বিচার বিভাগে

0
214


সেলিম চৌধুরী, সিএনএন বাংলাদেশ ঃ-
অবশেষে দেশের বিচার বিভাগে শুরু হতে যাচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম। আইনজীবীরা ঘরে বসেই করতে পারবেন জামিন শুনানি। এরই মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য পৃথক ওয়েবপোর্টালও প্রস্তুত করা হয়েছে। আবেদন, শুনানি সবই হবে এ পোর্টালে। ইমেইলে শুনানির সময় ও ভিডিও কনফারেন্সের লিঙ্ক পাঠানো হবে আইনজীবীকে। এসএমএসে দেওয়া হবে অ্যালার্ট।
নির্দিষ্ট সময়ে বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা যুক্ত হবেন ভিডিও কনফারেন্সে। দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাওয়া ভার্চুয়াল কোর্ট ঠিক এমনই হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। শুরুতে এ পদ্ধতিতে শুধু জামিন আবেদন দাখিল, শুনানি ও বেইল বন্ড দাখিলের সুযোগ পাবেন আইনজীবীরা। পরে যুক্ত হতে পারে অন্যান্য বিষয় ও
সুযোগ সুবিধা,
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আগামী সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।
এদিকে গত বুধবার ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক সংস্কারসংক্রান্ত বিশেষ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি এ-সংক্রান্ত আইনি জটিলতাগুলো দূরীকরণে উদ্যোগ নেন। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, অধ্যাদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে সুপ্রিম কোর্ট পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। বর্তমানে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতি চালু হলে করোনাভাইরাসের মতো যে কোনো দুর্যোগেই দেশের বিচার বিভাগের কার্যক্রম সচল রাখা যাবে। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের পর এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কভিড-১৯-এর কারণে সব জায়গায় আদালত চালানোর সুযোগ নেই

সংক্রমণের আশঙ্কায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যার যার অবস্থানে থেকে যেন বিচার করা যায়। বিচার কার্যক্রমের সুবিধার্থে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম করার জন্য আইনি বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট মনে করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাদেশের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে তাতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
যেভাবে চলবে ভার্চুয়াল কোর্ট : দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু করতে সুপ্রিম কোর্টকে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রজেক্ট। শুরুতে এ পদ্ধতির মাধ্যমে শুধু জামিন আবেদন ও বেইল বন্ড দাখিল করতে পারবেন আইনজীবীরা। এজন্য mycourt.judiciary.org.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সাইন আপ (নিজের প্রোফাইল তৈরি) করতে হবে সব আইনজীবীকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, সাইন আপ করার পর নিজের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ভার্চুয়াল কোর্ট পোর্টালে প্রবেশ করতে পারবেন আইনজীবীরা। পোর্টালে প্রবেশ করলেই জামিন আবেদন ও বেইল বন্ড দাখিল সংক্রান্ত দুটি ঘর আসবে। কোনো আইনজীবী জামিন আবেদন করতে হলে প্রথমে এ-সংক্রান্ত ঘরে প্রবেশ করে মূল জামিন আবেদন, ওকালতনামা ও সংযুক্ত নথিপত্র পৃথক তিন ধাপে আপলোড করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আবেদন ফি লাগবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, আইনজীবীর আবেদন দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। বিচারকের অনুমোদনসাপেক্ষে আইনজীবীর নির্ধারিত ইমেইলে পাঠানো হবে শুনানির সময় এবং একই ইমেইল বার্তায় ভিডিও কনফারেন্সের জন্য একটি লিঙ্ক প্রেরণ করা হবে আইনজীবীকে। নির্ধারিক সময়ে ওই লিঙ্কে প্রবেশ করে আইনজীবী বিচারকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নিজের আবেদনের বিষয়ে শুনানি করতে পারবেন। জামিন মঞ্জুরের পর একই পোর্টালেই বেইল বন্ড দাখিল করতে পারবেন আইনজীবীরা। ভার্চুয়াল কোর্ট পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনকারী ঢাকা কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, এ পদ্ধতিটি খুবই সহজভাবে করা হয়েছে, প্রতিটি ধাপেই নিয়মাবলি যুক্ত করা হয়েছে। এতে কারোরই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।