আটক সাংবাদিক শামসুজ্জামান হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশের এসি রবিউলের ভাই

    0
    28

    সাভারের আমবাগানের বাসা থেকে দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিরুদ্ধে।বুধবার (২৯ মার্চ) আনুমানিক ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা আমবাগানের ভাড়াবাসা থেকে শামসুজ্জামানকে তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ। গত এক বছর ধরে মাকে নিয়ে বাসাটির নিচতলায় ভাড়া থাকছেন তিনি। এ সাংবাদিক রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রবিউল করিমের ছোট ভাই।

    শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে নেয়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোর ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে ১৬ জন ব্যক্তি সাদা পোশাকে তার (শামসুজ্জামান শামস) বাসার সামনে যান। এর মধ্যে ৭-৮ জন তার বাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার রুম তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা শামসুজ্জামানের বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় চলে যান। সেখানে নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সেহেরির খাবার খান। খাওয়া শেষ হলে ভোর পৌঁনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তারা ফের শামসুজ্জামানের বাসায় আসেন।


    শামসুজ্জামানের বাসায় দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তখন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন শামসুজ্জামানের বাসায়। তিনি জানিয়েছেন, তারা বাসায় এসে জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামা-কাপড় নিতে বলা হয়। তখন রুমের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার বের হয়ে যান তারা। আর শামসুজ্জামানের বাসা তল্লাশির সময় দুবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

    স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম আরও জানান, শামসুজ্জামানকে তুলে নেয়ার সময় বাসার মালিক ফেরদৌস আলমকে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। বাসার মালিককে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাষ্ট্রের। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদরে জন্য নেয়া হচ্ছে শামসুজ্জামানকে।

    ফেরদৌস আলম বলেন, আনুমানিক ভোর ৪টায় কেউ একজন বাসার কলিং বেল চাপেন। বাসার নিচে নামার পর আমাকে তারা প্রশ্ন করেন, এ বাসায় শামসুজ্জামান থাকেন কিনা। হ্যাঁ বলার পর তাদের গেট খুলে ভেতরে আসতে দেই। তখন তারা ৬-৭ জনের মতো ছিলেন। এদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাক পরা ছিলেন। তারপর শামসুজ্জামানকে ডেকে তুলি। পরে দেখি সিআইডি কর্মকর্তাদের অনেকে তার পরিচিত।

    বাসার মালিক ফেরদৌস আরও বলেন, কী হয়েছে জানতে চাইলে সিআইডি সদস্যরা জানান, শামসুজ্জামানের একটি প্রতিবেদন নিয়ে মামলা হয়েছে। এরপর আর কিছু বলিনি আমি। তারপর শামসুজ্জামানের রুমে থাকা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো জব্দ করে তাকে নিয়ে যায়। এ সময় শামসুজ্জামানের মা বাসায় ছিলেন না।

    এদিকে শামসুজ্জামানের ব্যাপারে তার ভাবী হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশের এসি রবিউলের স্ত্রী উম্মে ইসলাম বলেন, বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। তাকে কেন নেয়া হয়েছে, অপরাধ কী, এসব কিছুই জানি না। তার সঙ্গে গতকালও কথা হয়েছে আমার। ওই সময়ও শামসুজ্জামান আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি। সে এর আগে প্রথম আলোতে কিছুদিন কাজের পর চাকরি ছেড়ে ব্যাংকে জয়েন করেছিল। কিন্তু আবার প্রথম আলোতে কাজ শুরু করেন শামসুজ্জামান।

    এ ব্যাপারে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানিয়েছেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে সিআইডির কোনো টিম এনেছেন কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। এছাড়া প্রথম আলোর এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কিনা, সে বিষয়টিও জানা নেই বলে জানান আজাদ রহমান।

    তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সাজানো একটি প্রতিবেদনের অভিযোগের মামলায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।