পরীমনির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে নাসির

0
153

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: ঢাকা বোট ক্লাবের ভেতরে বসিয়ে অভিনেত্রী পরীমনিকে প্রথমেই মদ্যপানের প্রস্তাব দেন অভিযুক্ত আসামি নাসির উদ্দিন ও অমি তালুকদার। মদ্যপান করতে না চাইলে পরীমনির মুখে জোরপূর্বক মদের বোতল চেপে ধরেন নাসির উদ্দিন।

এতে পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি বাধা দিতে গেলে অভিযুক্ত অমিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা বেধড়ক মারধর করেন। আর এদিকে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে পরীমনিকে ছুড়ে মারেন নাসির উদ্দিন।

ঘটনার সময় পরীমনি তার মোবাইল ফোন বের করে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল দিতে গেলে তার হাত থেকে টেনে ফোনটি ফেলে দেন নাসির উদ্দিন। পুনরায় ফোনটি তুলে কল দিতে গেলে আবারও টেনে ফেলে দেন তিনি।

এরপর পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টায় অমিসহ বাকি চারজন নাসির উদ্দিনকে সহায়তা করছিলেন। তবে সেখানে জিমি ও অন্যদের সহায়তায় নিজেকে রক্ষা করে ক্লাব থেকে বেরিয়ে যান পরীমনি।
সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে ঢাকার সাভার মডেল থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিনেত্রী পরীমনি এমনটাই উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযুক্ত আসামি নাসির উদ্দিন প্রতিষ্ঠিত একজন শিল্পপতি। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপারসের ব্যবসায়ে যুক্ত আছেন। বর্তমানে তিনি মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি এবং লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল মেম্বার।

এদিকে সোমবার অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়েরের পরপরই ডিবি পুলিশ রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসা থেকে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন ও অমি তালুকদারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে অমির গার্লফ্রেন্ড স্নিগ্ধা ও নাসিরের দুই নারী সঙ্গী লিপি ও সুমি রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাসিরের বিরুদ্ধে আগে মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নিয়ে রোববার (১৩ জুন) রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে রাতে মামলা না হওয়ার কারণে ডিবি পুলিশ অ্যাকশনে যাইনি। সাভার থানায় দায়ের করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করি।

মামলার এজাহারে যা উল্লেখ রয়েছে
গত ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে বনানীর বাসা থেকে আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, ও বনিসহ দু’টি গাড়ি করে উত্তরার উদ্দেশে রওয়ানা হই। পথিমধ্যে অমি বলে বেরিবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে যাই তখন রাত সাড়ে ১২টা। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর তোমরা নামলে নামতে পারো। তখন আমার ছোট বোন বনির প্রাকৃতির ডাকে সাড়া দিলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকি এবং বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হতেই নাসির উদ্দিন আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ নাসির উদ্দিন মদ্যপান করার জন্য জোর করে। আমি মদাপান করতে না চাইলে নাসির উদ্দিন জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল চেপে ধরে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। তখন আমার সামনের দাঁত ও ঠোটে আঘাত পাই।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি নাসির উদ্দিনকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করছিল। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো। মামলার দুই নম্বর আসামি অমি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং সেখানে নাসির উদ্দিন আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে ও জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত ৩টার দিকে আমার গাড়ি করে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমার সঙ্গীদের সঙ্গে ফিরে আসি। এরপর থেকে আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিল।