‘বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার দায় সরকার ও মালিককে নিতে হবে’

    0
    17

    চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশে গুলিবর্ষণের ঘটনায় পাঁচ শ্রমিক নিহত এবং আরও অন্তত শতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।

    সমাবেশে নেতারা বলেন, ‘এস. আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থানীয় শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান, ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, কর্মঘণ্টা ১০ থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ, রমজান মাসে ইফতার ও নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ, বাথ রুমের জন্য পানির ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। এমন কী শ্রমিকরা শুক্রবারেও শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছেন। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করার কথা বলা হলেও মালিকপক্ষ পুলিশ ডেকে জোরপূর্বক শ্রমিকদের কাজে যোগদানের চাপ দিতে থাকে।’

    ‘শ্রমিকরা কাজে যোগদানে অস্বীকৃতি জানিয়ে দাবি আদায়ে অনড় থাকলে পুলিশ বিনা উসকানিতে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। গণমাধ্যমে পাঁচজন শ্রমিক নিহত হওয়ার সংবাদ আসলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের অভিযোগ আরও শ্রমিকদের পাওয়া যাচ্ছে না।’

    রোববার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

    নেতারা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনা অতিমারির সময়ে যখন শ্রমিকদের বেতন-ভাতার সমস্যা সমাধানে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের এগিয়ে আসার কথা সেই সময় পুলিশ অতীতের ন্যায় মালিকপক্ষের স্বার্থরক্ষায় গুলি করে শ্রমিক হত্যা করেছে। যেমনটা ২০১৬ সালেও পুলিশ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে মালিকপক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে চারজন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল। এছাড়া ২০১৭ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের তাৎক্ষণিক মন্তব্য “ঘটনার সাথে স্থানীয়দের ইন্ধন আছে” এবং ডিআইজির মন্তব্য “পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে গুলি করেছে”। এ থেকেই বোঝা যায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির ফলাফল কী হবে! নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী এই সমাজ ব্যবস্থায় কোনো শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের বিচার আশা করা যায় না।’

    সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনা অতিমারির সময়ে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের পথে বসিয়েছে; চিনিকল বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আর এখন বেতন-ভাতা চাওয়ায় শ্রমিকদের বুকে গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই নয় সরকার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে না পারলেও মালিকদের স্বার্থরক্ষায় কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত শ্রম আইনের ১০০, ১০২, ১০৫ নম্বর ধারা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে। এমনিতেই অধিকাংশ মালিকরা শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করলেও ওভারটাইমে দ্বিগুণ মজুরি পরিশোধ করে না। তার ওপর সরকারের শ্রম আইনের ১০০, ১০২, ১০৫ নং ধারার উপর স্থগিতাদেশের কারণে মালিকদের বেপরোয়া লুণ্ঠন ও শ্রমশোষণের সুযোগ করে দিয়েছে।’

    নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শ্রম আইনের ওপর এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শ্রম অসন্তোষ দমনে প্রচলিত ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতাকে অস্বীকার করে সরকার মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সন্ত্রাস ও পুলিশি নির্যাতনের মাধ্যমে যে দমন পীড়ন চালাচ্ছে তা দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার দায় সরকার ও মালিককে নিতে হবে।’

    সমাবেশ থেকে বিতর্কিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স বাতিল, আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, মৃত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ পরিবারকে প্রদান, সব ক্ষেত্রে অবাধ ট্রেড অধিকার নিশ্চিত করা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান নেতারা।

    বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন- জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশাচালক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ হানিফ, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিক সংঘের সভাপতি মাহবুবুল আলম মানিক প্রমুখ।

    এছাড়া সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন।