বেদনায় ভরা দিন

    0
    22

    তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। দূরের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। এমন সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ। এ গোলাগুলির আওয়াজ ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি ঘিরে, যে বাড়িতে বসবাস করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একবিঘা জমির ওপর খুবই সাধারণ মানের ছোট্ট একটা বাড়ি। মধ্যবিত্ত মানুষের মতোই সেখানে বসবাস করেন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি সবসময়ই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। এই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যে আন্দোলন-সংগ্রাম – এই বাড়িটি তার নীরব সাক্ষী। সেই বাড়িটিই হলো আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। গোলাগুলির আওয়াজের মধ্যে আজানের ধ্বনি হারিয়ে যায়।

    রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিরাপত্তায় সাধারণত সেনাবাহিনীর ইনফেন্ট্রি ডিভিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ১০-১২ দিন পূর্বে বেঙ্গল ল্যাঞ্চারের অফিসার ও সৈনিকদের এ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমার মা, বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, লক্ষ্য করলেন কালো পোশাকধারী সৈনিকরা বাড়ির পাহারায় নিয়োজিত। তিনি প্রশ্নটা তুলেছিলেনও। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাননি।

    আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছিল দেশের মানুষের প্রতি অঢেল ভালোবাসা। তিনি সকলকেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন। তিনি কখনো এটা ভাবতেও পারেননি যে, কোনো বাঙালি তার ওপর গুলি চালাতে পারে বা তাকে হত্যা করতে পারে। তাকে বাঙালি কখনো মারবে না, ক্ষতি করবে না- এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি চলতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সেই বিশ্বাসের কি মূল্য তিনি পেয়েছিলেন?

    চারদিকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ। বিকট শব্দে মেশিনগান হতে গুলি করতে করতে মিলিটারি গাড়ি এসে দাঁড়ালো ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির সামনে। গুলির আওয়াজে ততক্ষণে বাড়ির সকলেই জেগে উঠেছে। আমার ভাই শেখ কামাল দ্রুত নিচে নেমে গেল রিসেপশন রুমে- কারা আক্রমণ করলো, কী ঘটনা জানতে। বাবার ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বিভিন্ন জায়গায় ফোন করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না।