ভিডিও দেখে ইসি চিহ্নিত করবে দলের অবস্থান 

    0
    10
    ১৪০ উপজেলায় আজ থেকে শুরু ভোটার তালিকা হালনাগাদ

    সংলাপে অংশ নেওয়া ২৮টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিশ্লেষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

    এক্ষেত্রে ইভিএম সংক্রান্ত বক্তব্যের ভিডিও দেখে দলের প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি বিষয়ে ইসি আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলোর নেতারা যে বক্তব্য দেন তা পর্যালোচনার আওতায় আসবে।

    এজন্য কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দলভিত্তিক নেতাদের ইভিএম সম্পর্কিত বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং ও এর লিখিত রূপ কমিশনে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এটি জমা দিতে হবে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

    জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোট নেওয়ার পক্ষে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টিসহ অন্তত চারটি রাজনৈতিক দল সরাসরি ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। বাকি দলগুলো ইভিএমের কারিগরি বিভিন্ন দিক, ইসির সক্ষমতা, ইভিএমে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করাসহ নানা ধরনের মতামত দেন।

    জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি তাদের অবস্থান জানান। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট করতে সংলাপের ভিডিও বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ইভিএম নিয়ে আলোচনায় মূলত তিন ধরনের বক্তব্য এসেছে। কেউ ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে, কেউ বিপক্ষে আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের শর্ত দিয়ে এটি ব্যবহারের কথা বলেছেন।

    যেমন কেউ বলেছেন, ৫০ আসনে ইভিএম দেওয়া হোক, কেউ ১০০ আসন আবার কেউ বলেছেন আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করা হোক। আবার অনেকে বিভিন্ন ধরনের টুলস ও ফিচার যুক্তের কথা বলেছেন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান বুঝতে তাদের ভিডিও দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিডিওর সঙ্গে ওই বক্তব্যে লিখিতভাবে উপস্থাপন করতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কে কী বক্তব্য দিয়েছেন তা তো সব মুখস্থ নেই। তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

    ভিডিওর ভিত্তিতেই ইসি সিদ্ধান্ত নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে সংখ্যার হিসাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের সংসদে কতটি আসন আছে, তাদের জনসমর্থন হার কত এসব দিকও বিবেচনা করা হবে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সামনে সংলাপ রয়েছে। ওই সময়ের যেসব মতামত আসবে সেগুলোও আমলে নেওয়া হবে।

    ইভিএমের কারিগরি দিক নিয়ে গত ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দিনের প্রদর্শনীর আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এতে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেয় ২৮টি। বিএনপিসহ ১৯টি রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেয়নি।

    সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত ইভিএম প্রদর্শনীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, আমরা ইভিএমের অন্ধ গ্রাহক ছিলাম না। সব আলোচনা লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতটুকু, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। ওই সময়ে তিনি বলেন, আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব, তখন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

    ইসি সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের পৃথক সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো মোটাদাগে যেসব পরামর্শ ও সুপারিশ করেছে দলভিত্তিক তার একটি খসড়া সারসংক্ষেপ ইসির কাছে উপস্থাপন করে ইসি সচিবালয়। ওই সারসংক্ষেপ দেখে কমিশন ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নির্ধারিত করতে পারছে না।

    এ বিষয়ে কোনোও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। ইসির একাধিক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, এর আগে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজন, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল ইসি। ওই সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাব, পরামর্শ ও সুপারিশের সারসংক্ষেপ দেখে ইসি আনুষ্ঠানিকভবে তাদের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ইভিএম স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় শুধু সারসংক্ষেপ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নয়। এ কারণে আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের শুধু ইভিএম সম্পর্কিত ভিডিও বিশ্লেষণ করতে চান কমিশন।

    সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ইসির হাতে কমবেশি দেড় লাখ ইভিএম আছে। এর মধ্যে কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। ইসির কাছে যে পরিমাণ ইভিএম রয়েছে তা দিয়ে একশ আসনে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে। এত সংখ্যক ইভিএম থাকার পরও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে এ মেশিন ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। এবার ইসি কী পদক্ষেপ নেবে সেই সিদ্ধান্ত নিতেই চলছে আলোচনা- পর্যালোচনা।

    সংলাপে রাজনৈতিক দলের মত : ইসির সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের সারসংক্ষেপে দেখা গেছে, সাতটি রাজনৈতিক দল সরাসরি ইভিএমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতাও বাড়ানোর পরামর্শ দেন। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।

    অপরদিকে জাতীয় পার্টি, মুসলিম লীগ, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ও জাতীয় পার্টি- জেপি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সরাসরি বিরোধিতা করেন।

    এছাড়া অন্য দলগুলো ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেস ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর কোন প্রতীকে তা দেওয়া হয়েছে তার রিসিপ্ট নির্ধারিত বক্সে ফেলার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করেছে। একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ তাদের প্রস্তাবে জনগণের কাছে আরও পরিচিত করার পর ইভিএম ব্যবহারের কথা বলেছে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) তাদের প্রস্তাবে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ও আইএসও সনদযুক্ত ইভিএম ব্যবহার করা ও এ মেশিনে ইন্টারনেট সংযুক্ত রাখার কথা বলেছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা সংলাপে বলেন, প্রচলিত আছে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রথম এক ঘণ্টা পর যত ভোট পড়বে তা নির্দিষ্ট প্রতীকে যাবে। এ বিষয়ে ভোটারদের সন্দেহ দূর করা দরকার। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ব্যালট ইউনিটে ভোটারের বায়োমেট্রিক সিস্টেম, জাকের পার্টি ই-ভোটিংয়ের আয়োজন এবং ইভিএমে ভোট প্রদানে ব্লক চেইন টেকনোলজি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ব্যাপক প্রচার চালানো এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ইভিএম ব্যবহারের ইসির সক্ষমতা ও দক্ষ জনবল আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একইভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে নানা ধরনের মতামত দিয়েছিল।

    ইসির সংলাপে অংশ নেয়নি যেসব দল : ইসির আমন্ত্রণ পেয়েও সংলাপে অংশ নেয়নি ১১টি রাজনৈতিক দল। সেগুলোর বেশিরভাগই বিএনপি ও তাদের জোটের শরিক। সংলাপে অংশ না নেওয়া দলগুলো হচ্ছে- বিএনপি, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও, সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।