মিনুর নিহতের ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনবেন আইনজীবী

    0
    16

    সামির পরিবর্তে তিন বছর কারাভোগ শেষে মুক্ত হওয়ার ১৩ দিনের মাথায় নিরপরাধ মিনু আক্তারের ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ মারা যাওয়ার ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনবেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

    নির্দোষ মিনু আক্তারকে কারামুক্ত করতে উচ্চ আদালতে লড়ে যাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার জন্য আমরা বিষয়টি আদালতের সামনে উপস্থাপন করব। সড়ক দুর্ঘটনায় মিনুর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা জরুরি।

    এর আগে রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে জাগো নিউজে খবর আসে চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় অন্যের হয়ে তিন বছর কারাভোগ শেষে সদ্য মুক্ত হওয়া মিনু আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গত ২৮ জুন রাতে নগরের বায়েজিদ সংযোগ সড়কে তিনি নিহত হলেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে তাকে দাফন করে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।

    তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি সেই আলোচিত মিনু আক্তার। রোববার (৪ জুলাই) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

    তিনি বলেন, ‘গত ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক থেকে দুর্ঘটনায় নিহত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। শনিবার বায়েজিদ থানার একটি টিম সীতাকুণ্ড এলাকার লোকজনকে ছবি দেখিয়ে মিনুর পরিচয় শনাক্ত করে।’

    এর আগে গত ১৬ জুন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে তিন বছরেরও অধিক সময় কারাভোগ শেষে মিনু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন।

    জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টকর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পারভীন আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টকর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়।

    মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে পারভীনকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। এর মধ্যে এক বছর তিন মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুম।

    মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে মিনু কারাগারে যান।

    এর আগে গত ১৬ জুন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে প্রায় তিন বছর কারাভোগ শেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন মিনু।

    এর আগে গত ৬ জুন চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে সাজা ভোগ করা নিরপরাধ মিনু আক্তারকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে গ্রেফতার করারও নির্দেশ দেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

    আদালতে ওইদিন মিনুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

    এর আগে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে সাজা ভোগকারী মিনু আক্তারের বিষয়টি উচ্চ আদালত (হাইকোর্টের) নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

    জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমী নামে এক নারীর পরিবর্তে সাজা ভোগ করা মিনুর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এর আগের দিন ২৩ মার্চ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমী নামে এক নারীর বদলে সাজা ভোগ করার অভিযোগ আনা মিনুর উপ-নথি হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঁঞা।

    মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. নোমান চৌধুরী বলেন, আদালতে সংরক্ষিত ছবি সংবলিত নথিপত্র দেখে কুলসুম আক্তার কুলসুমী আর মিনু এক নয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যেহেতু ইতোমধ্যে এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে, তাই মামলার উপ-নথি দ্রুত হাইকোর্টে পাঠানো হয়।

    জানা গেছে, হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবন সাজাসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। কিন্তু আদালতে আত্মসমর্পণ করে সাজা ভোগ করেন মিনু নামের ওই নারী। নামে ও ছবির মিল না থাকার পরও কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে মিনু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন দুই বছর ৯ মাস ১০ দিন।