৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম  

    0
    45

    বাজারে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। গত দুই মাসের ব্যবধানে শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলপি গ্যাসের দামও। এতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস নির্ভর নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই মাসের ব্যবধানে ৮ থেকে ৮৭ শতাংশ বেড়েছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম।নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি, যা বেশ চাপ সৃষ্টি করছে নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার তদারকি জোরদার করার পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এবং খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র তথ্য মতে, বিদায়ী বছরের আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫২ শতাংশ, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮.৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে পণ্যের দাম বাড়ার গতি কমেছে ০.৯৫ শতাংশ। তবে বাজার পরিস্থিতি এবং গত জানুয়ারি মাসে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি কমবে না বলে মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তবে কেউ কেউ মনে করছেন তা আরও বাড়তে পারে।

    শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫৭ শতাংশ দাম বেড়ে এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি মুরগির দাম ২৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ২২ ডিসেম্বর ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দুই মাসে ২২ শতাংশ দাম বেড়ে এখন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা চীনা আদার দাম ৮৭ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়।

    দুই মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে রসুনের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস আগে আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দুই মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম ৭১ শতাংশ বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

    খোলা চিনি ১০ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। চিকন মসুর ডাল কেজিতে ৮ শতাংশ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

    টিসিবির বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, আমদানি করা রসুনে গত এক বছরে ৬২ শতাংশ দাম বেড়েছে। গত মাসে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৯০ টাকায়। এক বছরে দেশি রসুনের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি রসুন প্রতি কেজি এখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

    গত এক বছরে ১৪৭ শতাংশ বেড়েছে আমদানি করা আদার দাম। এখন তা সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও তা ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। টিসিবির তথ্যে জানানো হয়, গত এক বছরে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়।

    বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সুযোগ নেই। ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে উৎপাদন খাতে এক ধরনের প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া শীতকালীন সবজির সরবরাহ কম হবে। নতুন ধান আসতে আরো তিন-চার মাস। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো কারণ দেখছি না।

    শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কারওয়ান বাজারের এক মুরগি ব্যবসায়ী জানান, বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় কয়েক দিন আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন দাম কিছুটা কমে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকায়। তিনি বলেন, পোলট্রি খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে অনেক খামারি খামারে বাচ্চা ফোটাচ্ছেন না। এতে বাজারে দেখা দিয়েছে ব্রয়লার মুরগির ঘাটতি।

    অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাত্র কিছুদিন আগে ডিমের দাম বেড়ে ডজন ১৫০ টাকা হয়েছিল, এখন কিছুটা কমে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই মাস আগে ডিমের ডজন বিক্রি করেছি মাত্র ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আমদানি বাড়লেও কমছে না আমদানি করা আদা ও রসুনের দাম। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়
    বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ২৮০ টাকায় এবং দেশি বলে পরিচিত কেরালা আদা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

    এ ব্যাপারে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ভোক্তারা খুব কষ্টে আছে। সাধারণ মানুষের জীবনমানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে জোরালো চেষ্টা করতে হবে।

    বাজারে আসা এক গার্মেন্টসকর্মী বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ার কারণে পণ্য কেনার তালিকা কাটছাঁট করেও বাজার খরচ কমাতে পারছি না। দাম বেড়ে আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে প্রতিটি পণ্যই।

    বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তাই বাজারে এর একটা প্রভাব রয়েছে। এছাড়াও নতুন করে এক মাসেই দুইবার বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

    জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। রমজান উপলক্ষে আগামী রোববার টিসিবির অডিটরিয়ামে আমদানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে বড় পরিসরে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে।’