৯৯৯-এ ফোন করার পর ওপুলিশের সহযোগিতা পায় নাই

    0
    25

    স্বামী-সন্তানসহ এক নারী ঘুরতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সেখান থেকে তার স্বামীকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে দুই দফায় গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ সৈকতেই পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্পও রয়েছে। তারপরও সৈকত থেকে কীভাবে স্বামীর কাছ থেকে একজন নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে দুই দফায় গণধর্ষণের ঘটনা ঘটল- এ প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজটা কী? তারা কী করে?

    জানা গেছে, বুধবার কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী পর্যটক। সংঘবদ্ধ ধর্ষকচক্র ইচ্ছে করে ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে প্রথমে ঝগড়া বাধায়। পরে পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে আলাদা করে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়।

    ভুক্তভোগী নারীর ভাষ্য, সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বুধবার সকালে তারা কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেন। বিকালে তারা সৈকতের লাবনী পয়েন্টে যান।

    ধর্ষণের শিকার ওই নারী র‌্যাবকে জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ২২ ডিসেম্বর সকালে শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কক্সবাজারে যান পৌঁছান ওই নারী। সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে আসার সময় ভিড়ের মাঝে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার স্বামীর। পরে তাদের কাছে ক্ষমা চান ওই নারীর স্বামী। কিন্তু কৌশলে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বাধায় ওই যুবকরা। পরে ধাক্কাধাক্কি করে ওই নারীর কাছ থেকে স্বামী-সন্তানকে আলাদা করে ফেলে তারা। একপর্যায়ে ছুরি দেখিয়ে এবং স্বামীকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে সিএনজি করে শহরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায় ওই যুবকরা। সেখানে তিনজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।

    এরপর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারের জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। এ ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে হোটেলের কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায় ধর্ষকরা। পরে জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে ডেকে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী। পরবর্তীতে ফোন দেন ৯৯৯-এ।

    এদিকে ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে কক্সবাজার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ওই নারীকে সহায়তায় এগিয়ে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

    ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, ৯৯৯-এ ফোন করার পর আমাকে ফোন দেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা। তাকে নাম-পরিচয় না বললেও পুরো বিষয়টি জানাই। কিন্তু তিনি আমার কাছে না এসে উল্টো থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। এরপর র‌্যাবকে ফোন করে জানালে র‌্যা-১৫ এর একটি টিম এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে।

    এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় ৭ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। 

    কক্সবাজারে নারী পর্যটককে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্তের কথা জানিয়েছে র‌্যাব-১৫। এ ছাড়া রিয়াজ উদ্দিন ছোটন (৩৩) নামে এক হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে।

    শনাক্তরা হলেন- কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম (২৩) ও মোহাম্মদ শফিক ওরফে গুন্ডা শফির ছেলে ইসরাফিল হুদা জয়।তবে অন্যজনের পরিচয় জানাতে পারেনি র‌্যাব। তবে অন্যজন আবুল কাসেমের ছেলে মেহেদী হাসান বাবু ওরফে গুন্ডায়া বাবু বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

    কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও মামলার আসামি হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে আটক করা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্সবাজার সদর থানার মাধ্যমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করা হবে। 

    কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওই নারীকে ওসিসিতে রাখা হয়েছে। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। হাসপাতালে তাকে দুই থেকে তিন দিন রাখা হতে পারে।

    কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে জানান, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশকে।

    এ ব্যাপারে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে স্থান থেকে অপহরণের কথা উঠেছে ওই স্থান থেকে অপহরণ কোনোভাবেই সহজ নয়। কারণ ওখানে সর্বদাই ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার থাকে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে এই ঘটনায় রহস্যের শেষ নেই। তবে আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসল ঘটনা উৎঘাটন হবে।